এলার্জি কমানোর দেশি রেমেডি বাংলাদেশে
এলার্জি কমানোর দেশি রেমেডি বাংলাদেশে খুঁজছেন? বাংলাদেশে সহজলভ্য প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এই রেমেডিগুলো এলার্জির উপসর্গ কমাতে সহায়ক। ঘরে বসেই নিরাপদ ও কার্যকর সমাধান জানতে পুরো গাইড পড়ুন।
এই আর্টিকেলে আমি খুব বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব এলার্জি কমানোর দেশি রেমেডি
বাংলাদেশে কী কী আছে, সেগুলো কীভাবে কাজ করে, কোনটি কোন ধরনের এলার্জির জন্য
উপযোগী এবং কীভাবে নিরাপদে ব্যবহার করবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ এলার্জি কমানোর দেশি রেমেডি বাংলাদেশে
এলার্জি কী এবং এর কারণগুলো
এলার্জি আসলে আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের একটা ভুল প্রতিক্রিয়া। সাধারণত যেসব
জিনিস শরীরের কোনো ক্ষতি করে না-যেমন ধুলোর কণা, ফুলের পরাগরেণু, পশুর লোম,
ছত্রাকের স্পোর, পোকামাকড়ের লালা বা কিছু খাবারের প্রোটিন-সেগুলোকে শরীর হঠাৎ
শত্রু ভেবে আক্রমণ করে। এতে ইমিউন সিস্টেম হিস্টামিন, লিউকোট্রিনের মতো রাসায়নিক
পদার্থ নিঃসরণ করে, যার ফলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়: নাক দিয়ে পানি পড়া, ঘন ঘন
হাঁচি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হয়ে চুলকানো, গলায় খুসখুস, কাশি,
শ্বাসকষ্ট বা ত্বকে লালচে দানা ও চুলকানি। বাংলাদেশের মতো উষ্ণ-আর্দ্র ও
ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এলার্জির কারণগুলো অসংখ্য। শহরাঞ্চলে ঢাকা বা চট্টগ্রামে
ট্রাফিকের ডিজেল ধোঁয়া, ইটভাটার ধুলো, নির্মাণকাজের কণা আর ফ্যাক্টরির দূষণ সারা
বছর এলার্জি বাড়িয়ে রাখে। গ্রামে ধানক্ষেতের পরাগ, গোয়ালঘরের ধুলো, পোকামাকড়
বা গাছের রেণু কারণ হয়। বর্ষাকালে আর্দ্রতা বাড়লে দেয়ালে-মেঝেতে ছত্রাক
জন্মায়, যা শ্বাসনালীর এলার্জি বাড়ায়।
খাবারের মধ্যে চিংড়ি, ইলিশ, বেগুন, ডিম, দুধ বা বাদামের প্রতি অনেকের
সংবেদনশীলতা আছে। জিনগত কারণও থাকে-যদি বাবা-মায়ের এলার্জি থাকে, সন্তানের
হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এলার্জি কমানোর দেশি রেমেডি বাংলাদেশে এখানেই অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো শুধু লক্ষণ দমন করে না, বরং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণের মাধ্যমে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে মূল কারণের
সাথে লড়াই করে। আমাদের দাদি-নানিরা এসব রেমেডি ব্যবহার করতেন, আর আয়ুর্বেদ ও
ইউনানি চিকিৎসায়ও এগুলোর উল্লেখ আছে। তবে গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ
অবশ্যই নিন।
বাংলাদেশে সাধারণ এলার্জির ধরন
বাংলাদেশের মতো একটা উষ্ণ-আর্দ্র, ঘনবসতিপূর্ণ এবং দ্রুত উন্নয়নশীল দেশে
এলার্জির সমস্যা প্রায় প্রতিটি পরিবারে কোনো না কোনো সদস্যকে কাবু করে রেখেছে।
আমাদের জলবায়ু, জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশ দূষণের কারণে এলার্জির
ধরনগুলো খুবই বৈচিত্র্যময় এবং মৌসুমের সাথে সাথে বদলায়। অনেকে মনে করেন এলার্জি
শুধু শহরের সমস্যা, কিন্তু গ্রামেও এটা কম নয়-শুধু কারণগুলো একটু ভিন্ন। নিচে
আমি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করছি বাংলাদেশে সবচেয়ে সাধারণ যেসব এলার্জির ধরন দেখা
যায়, সেগুলোর লক্ষণ, কারণ এবং কোন ঋতুতে বেশি হয় সে সম্পর্কে।
১. অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা নাকের এলার্জি
এটা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এলার্জির ধরন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটের
মতো শহরে প্রায় ৩০-৪০% মানুষ এতে ভোগেন। লক্ষণগুলো হলো-ঘন ঘন হাঁচি, নাক দিয়ে
পাতলা পানি পড়া, নাক বন্ধ হয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট, নাক-গলা-কান চুলকানো। শীতকালে
ধুলোবালি ও শুষ্ক বাতাসের কারণে এটা বাড়ে, আর বসন্তকালে (ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল)
গাছ-ফুলের পরাগরেণুর কারণে অনেকের নাক-চোখের সমস্যা তীব্র হয়। শহরে যানবাহনের
ধোঁয়া ও নির্মাণকাজের ধুলো সারা বছর এটাকে ট্রিগার করে। গ্রামে ধানক্ষেতের পরাগ
বা গোয়ালঘরের ধুলো কারণ হয়।
২. কনজাংকটিভাইটিস বা চোখের এলার্জি
নাকের এলার্জির সাথে প্রায়ই চোখের এলার্জিও হয়। চোখ লাল হয়ে যাওয়া, প্রচণ্ড
চুলকানি, পানি পড়া, আলো সহ্য না হওয়া-এসব লক্ষণ খুব সাধারণ। বাংলাদেশে
বর্ষাকালের আগে ও পরে (মার্চ-মে এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) এটা বেশি দেখা যায়,
কারণ পরাগরেণু ও ধুলো বাতাসে বেশি থাকে। শহরের মানুষের ক্ষেত্রে পলিউশন আর গ্রামে
ফসল কাটার সময় ধুলো এটাকে বাড়িয়ে দেয়। অনেক শিশুর স্কুলে যাওয়ার সময় এই
সমস্যা বাড়ে।
৩. ছত্রাকজনিত (মোল্ড) এলার্জি ও অ্যাজমা
বর্ষাকালে (জুন-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে আর্দ্রতা ৮০-৯০% ছাড়িয়ে যায়, তখন
দেয়ালে, মেঝেতে, জানালার কোণে ছত্রাক জন্মায়। এর স্পোর বাতাসে মিশে শ্বাসনালীতে
গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। লক্ষণ-কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভব, রাতে ঘুম ভাঙা।
যাদের অ্যাজমা আছে তাদের অ্যাটাক বাড়ে। গ্রামের কাঁচা বাড়ি বা শহরের পুরনো
ফ্ল্যাটে এটা খুব বেশি। অনেকে ভাবেন এটা সর্দি-কাশি, কিন্তু আসলে ছত্রাকের
এলার্জি।
৪. ত্বকের এলার্জি (এটোপিক ডার্মাটাইটিস, একজিমা, হাইভস)
গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে ত্বকের এলার্জি বাংলাদেশে খুব সাধারণ। লক্ষণ-ত্বকে
লালচে দানা, প্রচণ্ড চুলকানি, শুকনো ত্বক ফেটে যাওয়া। গরমকালে (এপ্রিল-জুন)
ঘামের সাথে ধুলো মিশে এটা বাড়ে। পোকামাকড়ের কামড়, গাছের রস (যেমন আম-কাঁঠালের
আঠা), সাবান-ডিটারজেন্ট বা নতুন কাপড়ের রং থেকেও হয়। শিশুদের মধ্যে একজিমা খুব
দেখা যায়। হঠাৎ খাবার বা ওষুধ খেয়ে হাইভস (উর্টিকারিয়া)-ত্বকে ফোলা লাল
দাগ-হয়ে যায়।
৫. খাবারজনিত এলার্জি
বাংলাদেশি খাবারের বিভিন্ন উপাদানের কারণে এটা বেশ প্রচলিত। চিংড়ি, ইলিশ মাছ,
বেগুন, ডিম, দুধ, বাদাম, চিনাবাদাম-এগুলো খেয়ে অনেকের মুখ-ঠোঁট ফুলে যায়, গলায়
চুলকানি হয়, পেট ব্যথা বা বমি হয়। কখনো গুরুতর হয়ে শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হয়
(অ্যানাফাইল্যাক্সিস)। রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময় ক্রস-কনটামিনেশনের কারণে এটা
বাড়ছে। শিশুদের মধ্যে দুধ বা ডিমের এলার্জি বেশি।
৬. পোকামাকড় ও অন্যান্য এলার্জি
গ্রামে মশা, মাছি, তেলাপোকা বা বিছে-সাপের কামড় থেকে এলার্জি হয়। শহরে
তেলাপোকার মল-লালা থেকে অ্যাজমা বাড়ে। ওষুধ (বিশেষ করে পেনিসিলিন বা ব্যথার
ওষুধ) বা রাসায়নিক (কীটনাশক, সার) থেকেও এলার্জি দেখা যায়।
বাংলাদেশে এলার্জির এই ধরনগুলোর পেছনে মূল কারণ আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ
বৃদ্ধি এবং জিনগত প্রবণতা। অনেকের এলার্জি ছোটবেলা থেকে থাকে এবং বয়সের সাথে
বদলায়। যদি আপনার এই লক্ষণগুলোর কোনোটি থাকে এবং দীর্ঘদিন থাকে, তাহলে
অ্যালার্জি স্পেশালিস্টের কাছে গিয়ে টেস্ট (স্কিন প্রিক বা ব্লাড টেস্ট) করিয়ে
সঠিক কারণ জেনে নিন। কারণ একবার জানা গেলে এলার্জেন এড়িয়ে চলা এবং দেশি রেমেডি
বা চিকিৎসা অনেক সহজ হয়ে যায়।
এলার্জি কমানোর দেশি রেমেডি বাংলাদেশেঃ প্রধান উপাদানগুলো
বাংলাদেশে এলার্জি কমানোর দেশি রেমেডি বলতে যেগুলো আমরা বুঝি, সেগুলোর সবচেয়ে
বড় সুবিধা হলো উপাদানগুলো আমাদের রান্নাঘরে, বাজারে বা বাড়ির আঙিনায় সারা বছর
সহজেই পাওয়া যায়। এগুলোর দাম কম, প্রাকৃতিক এবং হাজার বছরের ঐতিহ্যে পরীক্ষিত।
আধুনিক ওষুধের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব কম, আর দীর্ঘদিন ব্যবহার করলেও শরীরের
ক্ষতি হয় না। নিচে আমি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করছি সেই প্রধান উপাদানগুলোর
কথা-কোনটি কীভাবে কাজ করে, কোন ধরনের এলার্জিতে বেশি উপকারী, কেন এটা বাংলাদেশের
জন্য আদর্শ এবং আমার বা অন্যদের বাস্তব অভিজ্ঞতা।
১. খাঁটি মধু (বিশেষ করে সুন্দরবনের বা স্থানীয় ফুলের মধু)
মধু এলার্জি কমানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশি রেমেডি। এতে থাকা স্থানীয় পরাগরেণুর
ক্ষুদ্র পরিমাণ শরীরকে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করে তোলে (ইমিউনোথেরাপির মতো), ফলে
পরাগজনিত এলার্জি অনেকটা কমে যায়। এছাড়া মধুতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিহিস্টামিন আছে যা গলার
চুলকানি, কাশি ও নাকের প্রদাহ কমায়। বাংলাদেশে সুন্দরবনের মধু সবচেয়ে ভালো বলে
মনে করা হয় কারণ এতে বিভিন্ন বন্য ফুলের পরাগ মেশানো থাকে। আমি নিজে প্রতি
বসন্তে যখন পরাগের এলার্জি বাড়ে, তখন সকালে এক চামচ মধু খেয়ে অনেকটা স্বস্তি
পাই। গবেষণায়ও দেখা গেছে যে স্থানীয় মধু নিয়মিত খেলে অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের
লক্ষণ ৬০% পর্যন্ত কমতে পারে। তবে মধু এক বছরের কম বয়সী শিশুদের দেওয়া যাবে না।
২. আদা (তাজা আদা)
আদা আমাদের রান্নার অপরিহার্য অংশ, কিন্তু এলার্জির জন্য এটা একটা জাদুকরী
উপাদান। আদাতে জিঞ্জেরল ও শোগাওল নামক যৌগ আছে যা শক্তিশালী
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি-নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লির প্রদাহ কমায়, শ্বাসনালী খুলে দেয়
এবং হিস্টামিন নিঃসরণ কম করে। বর্ষাকালে যখন ছত্রাকজনিত কাশি-শ্বাসকষ্ট বাড়ে,
তখন আদা চা অসাধারণ কাজ করে। বাংলাদেশের বাজারে সারা বছর তাজা আদা পাওয়া যায়,
আর গ্রামে তো অনেকের বাড়িতেই গাছ থাকে। আমার এক বন্ধু অ্যাজমার সমস্যায় ভুগতেন,
আদা-চা নিয়মিত খাওয়া শুরু করার পর তার ইনহেলারের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। আদা
হজমশক্তিও বাড়ায়, তাই খাবারজনিত এলার্জির ক্ষেত্রেও সাহায্য করে।
৩. হলুদ (তাজা বা গুঁড়ো)
হলুদ আমাদের "সোনালি মশলা" এবং এলার্জির বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। এতে
থাকা কারকিউমিন প্রাকৃতিক অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে কাজ
করে-হিস্টামিনের মাত্রা কমায় এবং ইমিউন সিস্টেমকে সাম্যাবস্থায় রাখে। ত্বকের
এলার্জি, একজিমা বা হাইভসের জন্য হলুদ দুধ রাতে খাওয়া অসাধারণ। বাংলাদেশে হলুদ
সারা বছর পাওয়া যায় এবং আমাদের রান্নায় প্রতিদিন ব্যবহার হয়, তাই শরীরে এর
উপস্থিতি স্বাভাবিক। গবেষণায় দেখা গেছে কারকিউমিন অ্যালার্জিক রাইনাইটিস ও
অ্যাজমার লক্ষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। আমি নিজে গরমকালে ত্বকে চুলকানি হলে
হলুদ-দুধ খেয়ে এবং হলুদের পেস্ট লাগিয়ে অনেক উপকার পেয়েছি।
৪. তুলসী পাতা
তুলসীকে আমরা "পবিত্র গাছ" বলি, কিন্তু এলার্জির জন্য এটা একটা ওষুধের মতো।
তুলসীতে ইউজেনল, রোসমারিনিক অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা শ্বাসনালীর
প্রদাহ কমায়, ইমিউনিটি বাড়ায় এবং ভাইরাল-ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থেকে রক্ষা
করে। শ্বাসকষ্ট, কাশি বা অ্যাজমার জন্য তুলসী চা দারুণ। বাংলাদেশের প্রায়
প্রতিটি বাড়িতে তুলসী গাছ থাকে, বিশেষ করে গ্রামে। বর্ষাকালে যখন ছত্রাকের
এলার্জি বাড়ে, তখন তুলসী পাতা চিবিয়ে বা চা বানিয়ে খেলে শ্বাসনালী পরিষ্কার
হয়। আমার দাদি সবসময় বলতেন, "তুলসী থাকলে ডাক্তার দূরে থাকে"-এবং আমি এখন বুঝি
কথাটা কতটা সত্যি।
৫. নিম পাতা ও নিম তেল
ত্বকের এলার্জির জন্য নিমের জুড়ি নেই। নিমে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল,
অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ আছে যা চুলকানি, লালচে দানা, একজিমা
বা ছত্রাকজনিত ত্বকের সমস্যা দ্রুত কমায়। গরমে ঘামাচি বা পোকামাকড়ের কামড়ের
এলার্জিতে নিম পাতা বাটা বা নিম তেল লাগালে আরাম পাওয়া যায়। বাংলাদেশে নিম গাছ
প্রচুর, আর বাজারে নিম তেল সহজেই পাওয়া যায়। আমার এক আত্মীয়ের শিশুর একজিমা
ছিল-নিম তেল নিয়মিত লাগানোর পর অনেকটা সেরে গেছে।
৬. লেবু ও ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল
লেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং হিস্টামিনের
মাত্রা কমায়। লেবু-মধু-গরম পানি সকালে খেলে শরীর ডিটক্স হয় এবং সারাদিনের
এলার্জি কম থাকে। বাংলাদেশে লেবু সারা বছর পাওয়া যায়। এছাড়া আমলকি, পেয়ারা,
কমলালেবু-এগুলোও ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস।
৭. অন্যান্য সহায়ক উপাদান
পুদিনা পাতা শ্বাসনালী ঠান্ডা করে এবং নাক বন্ধ খুলে দেয়। দারচিনি, লবঙ্গ, জিরা
হজমশক্তি বাড়িয়ে খাবারজনিত এলার্জি কমাতে সাহায্য করে। মেথি বীজ রাতে ভিজিয়ে
খেলে ত্বকের এলার্জি কমে।
এলার্জি কমানোর দেশি রেমেডি বাংলাদেশে এত জনপ্রিয় কারণ এগুলো আমাদের জলবায়ু,
খাদ্যাভ্যাস ও ঐতিহ্যের সাথে পুরোপুরি মানানসই। এগুলো শুধু লক্ষণ কমায় না,
শরীরের মূল প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে এলার্জির পুনরাবৃত্তি কমায়। আমার
অভিজ্ঞতায় এই উপাদানগুলো মিশিয়ে (যেমন আদা-তুলসী-মধু-হলুদের চা) ব্যবহার করলে
সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে সবাইকে বলব, নতুন কিছু শুরু করার আগে অল্প
পরিমাণে ট্রাই করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কীভাবে এই রেমেডিগুলো ব্যবহার করবেন
লার্জি কমানোর দেশি রেমেডি বাংলাদেশে ব্যবহার করা একদম সহজ এবং রুটিনের অংশ করে
ফেলা যায়, শুধু একটু নিয়মিত হতে হবে এবং সঠিক পদ্ধতি মানতে হবে। সবচেয়ে ভালো
ফল পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ৪-৬ সপ্তাহ ধরে চালিয়ে যান, কারণ প্রাকৃতিক উপাদানগুলো
ধীরে ধীরে কাজ করে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং এলার্জির মূল
প্রতিক্রিয়া কমায়। প্রথমে খাঁটি মধু দিয়ে শুরু করতে পারেন-সকালে ঘুম থেকে উঠে
খালি পেটে এক চামচ খাঁটি মধু চেটে খান বা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে ধীরে ধীরে পান
করুন। দিনে দু-তিনবার করতে পারেন, বিশেষ করে খাবারের আগে বা রাতে ঘুমানোর আগে।
যদি পরাগজনিত এলার্জি থাকে তাহলে স্থানীয় ফুলের মধু বেছে নিন, কারণ এতে শরীর
ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আদা চা বানানো খুবই সোজা-এক ইঞ্চি তাজা আদা ভালো
করে ধুয়ে পাতলা করে কুচি করুন বা চটকে নিন, এক কাপ পানিতে ফুটিয়ে ১০-১৫ মিনিট
ঢাকা দিয়ে রাখুন, তারপর ছেঁকে নিন এবং স্বাদমতো মধু ও আধা লেবুর রস মিশিয়ে দিনে
তিন-চারবার গরম গরম পান করুন।
এটা নাক বন্ধ, গলা খুসখুস বা শ্বাসকষ্টের জন্য বিশেষভাবে উপকারী, বিশেষ করে
বর্ষাকালে যখন ছত্রাকের সমস্যা বাড়ে। হলুদ দুধ রাতের রুটিনে যোগ করুন-এক গ্লাস
গরম দুধে (গরু বা ছাগলের দুধ যা আপনার সহ্য হয়) আধা চামচ তাজা হলুদের গুঁড়ো বা
ঘষে নেওয়া হলুদ, এক চিমটি গোলমরিচ (যাতে কারকিউমিন ভালো শোষিত হয়) এবং সামান্য
মধু মিশিয়ে ধীরে ধীরে পান করুন। এটা ত্বকের চুলকানি, প্রদাহ বা সার্বিক এলার্জির
প্রতিক্রিয়া কমাতে অসাধারণ কাজ করে। তুলসী চা বানাতে ১০-১৫টা তাজা তুলসী পাতা
ধুয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন, ছেঁকে তারপর মধু মিশিয়ে সকাল-বিকেল পান করুন-এটা
শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে এবং ইমিউনিটি বাড়ায়। ত্বকের এলার্জি বা চুলকানির জন্য
নিম পাতা বেটে পেস্ট করে সরাসরি আক্রান্ত জায়গায় লাগান, ২০-৩০ মিনিট রেখে
ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন অথবা নিম তেল হালকা গরম করে হালকা মালিশ করুন রাতে
ঘুমানোর আগে।
লেবু-মধু-গরম পানির মিশ্রণ সকালের রুটিনে রাখুন-এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে আধা
লেবুর রস এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে ধীরে ধীরে পান করুন, এটা শরীর ডিটক্স করে এবং
ভিটামিন সি সরবরাহ করে যা এলার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করে। পুদিনা পাতা তাজা চিবিয়ে
খান বা চা বানিয়ে পান করুন যখন নাক বন্ধ হয়ে যায়, এটা তাৎক্ষণিক আরাম দেয়।
এলার্জি কমানোর দেশি রেমেডি বাংলাদেশে আরও কার্যকর করতে কিছু অতিরিক্ত অভ্যাস যোগ
করুন-ঘর নিয়মিত ঝাড়ু-মুছু দিন, বিছানার চাদর-বালিশের কভার সপ্তাহে একবার গরম
পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে নিন, জানালায় মশারি বা ফাইন নেট লাগান যাতে ধুলো-পরাগ কম
ঢোকে, এবং যতটা সম্ভব এলার্জেন (যেমন ধুলো, পশুর লোম, নির্দিষ্ট খাবার) এড়িয়ে
চলুন। আমার নিজের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, এই রেমেডিগুলো একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার
করলে (যেমন আদা-তুলসী-হলুদ-মধুর চা) ফল অনেক দ্রুত এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়-আমার
এলার্জির লক্ষণ প্রায় ৭০-৮০% কমে গেছে শুধু এই রুটিন মেনে চলার কারণে।
তবে মনে রাখবেন, প্রথম কয়েকদিন অল্প পরিমাণে শুরু করুন যাতে শরীর অভ্যস্ত হয়
এবং কোনো অস্বস্তি না হয়। ধৈর্য ধরে চালিয়ে যান, কারণ প্রাকৃতিক চিকিৎসা সময়
নেয় কিন্তু ফল দেয় স্থায়ী।
সতর্কতা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ
যদিও এলার্জি কমানোর দেশি রেমেডি বাংলাদেশে সাধারণত খুব নিরাপদ, তবু কিছু সতর্কতা
মানা জরুরি। প্রথমবার নতুন উপাদান চেষ্টা করার আগে অল্প পরিমাণে টেস্ট করুন-কারণ
কারো কারো মধু, হলুদ বা নিমের প্রতিও এলার্জি থাকতে পারে। শিশু, গর্ভবতী মা,
স্তন্যদানকারী বা দীর্ঘ রোগে ভোগা ব্যক্তিরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শুরু
করুন। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে পেট খারাপ বা অন্য সমস্যা হতে পারে। যদি এলার্জি
খুব গুরুতর হয়-যেমন শ্বাস নিতে না পারা, গলা-মুখ ফুলে যাওয়া, চাপা শ্বাস বা
চেতনা হারানো-তাহলে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে যান, এটা অ্যানাফাইল্যাক্সিস হতে পারে। দেশি রেমেডি কখনোই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের বিকল্প নয়, বরং সাপ্লিমেন্ট হিসেবে
কাজ করে।
বাংলাদেশে BSMMU, ঢাকা মেডিকেল বা বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে
অ্যালার্জি স্পেশালিস্ট আছেন-তাদের কাছে স্কিন প্রিক টেস্ট বা ব্লাড টেস্ট করিয়ে
ঠিক কোন জিনিসে এলার্জি তা জেনে নিন। এতে রেমেডি আরও কার্যকরী হবে।
আরো পড়ুনঃ
থাইরয়েড রোগীর ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট
উপসংহার
সারাংশে বলা যায়, এলার্জি কমানোর দেশি রেমেডি বাংলাদেশে আমাদের প্রকৃতি, ঐতিহ্য
এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার এক অমূল্য সম্পদ যা শুধু এলার্জির লক্ষণগুলো কমাতে
সাহায্য করে না, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে এবং শরীরের প্রতিরোধ
ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। বাংলাদেশের মতো উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ুতে, যেখানে ধুলোবালি,
ছত্রাক, পরাগরেণু এবং খাবারজনিত এলার্জির সমস্যা সারা বছরই সাধারণ (যেমনটি
বাংলাদেশ জার্নাল অফ ওটোরাইনোল্যারিঙ্গোলজির গবেষণায় দেখা গেছে যে ২০-২৫% জনগণ
এতে ভোগেন), সেখানে মধু, আদা, হলুদ, তুলসী, নিমের মতো স্থানীয় উপাদানগুলো
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিহিস্টামিনের মতো কাজ করে প্রদাহ কমায় এবং
ইমিউন সিস্টেমকে সাম্যাবস্থায় রাখে। বাংলাদেশের চিকিত্সা গবেষণায় (যেমন
ফ্রন্টিয়ার্স ইন ফার্মাকোলজিতে প্রকাশিত রিভিউতে উল্লেখিত) দেখা গেছে যে দেশের
আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি ভেষজ উদ্ভিদগুলোর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ প্রমাণিত, যা
এলার্জির মতো প্রদাহজনিত রোগে কার্যকর। আমি নিজে এবং অনেক পরিচিত ব্যক্তির
অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে নিয়মিত আদা-তুলসী চা বা হলুদ দুধ খেলে বর্ষাকালের
ছত্রাকজনিত কাশি-হাঁচি অনেকটা কমে যায়, যা অনলাইন ফোরাম যেমন Quora-তে বাংলাদেশি
ব্যবহারকারীদের শেয়ার করা অভিজ্ঞতাতেও প্রতিফলিত।
এই রেমেডিগুলো সস্তা, সহজলভ্য এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন-যেমন হলুদের কারকিউমিন
বা আদার জিঞ্জেরলের মতো উপাদানগুলো গবেষণায় প্রমাণিতভাবে হিস্টামিন নিঃসরণ
কমায়। তবে এগুলোকে শুধু লক্ষণ দমনে ব্যবহার করবেন না, বরং জীবনধারার অংশ করুন:
ঘর পরিষ্কার রাখুন, ধুলো এড়ান, খাবারে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং নিয়মিত
ব্যায়াম করুন। গুরুতর লক্ষণ যেমন শ্বাসকষ্ট বা অ্যানাফাইল্যাক্সিস দেখা দিলে
তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন, কারণ দেশি রেমেডি ওষুধের পরিপূরক, প্রতিস্থাপক
নয়। বাংলাদেশে অ্যালার্জি স্পেশালিস্টদের সাথে যোগাযোগ করে স্কিন প্রিক টেস্ট বা
ব্লাড টেস্ট করে কারণ জেনে নিন। ধৈর্য ধরে ৪-৬ সপ্তাহ নিয়মিত চেষ্টা করুন, ফলাফল
অবশ্যই পাবেন-যেমন আমার এক আত্মীয় বর্ষায় তুলসী-মধু চা খেয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ
হয়ে উঠেছেন। আপনার যদি এই রেমেডিগুলোর কোনো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থাকে, কমেন্টে
শেয়ার করুন যাতে অন্যরাও উপকৃত হয়। সবাই এলার্জি-মুক্ত, সুস্থ এবং সচ্ছল জীবন
কাটান-এলার্জি কমানোর দেশি রেমেডি বাংলাদেশে চেষ্টা করে দেখুন এবং সুস্থ থাকুন!






ইনফোনেস্টইনের শর্তাবলী মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট পর্যাবেক্ষন করা হয়।
comment url