অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন
অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন নেওয়া একটি দায়িত্বশিল শখ। আমারা ওনেকেই অ্যাাকুরিয়াম বাসাই রেখে থাকি বিভিন্ন রং এর রঙ্গিন মাছ যখুন পানিতে ভেসে বেড়াই তখুন সেটি শুধু মানসিক শান্তি দেই না, বরংচ ঘরের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বারিয়ে দেই। তবে এই মাছকে দির্ঘদিন সুস্থ ও বাঁচিয়ে রাখার জন্য এদের যত্ন নেওয়া অপরিহার্য।
অনেকেই মনে করেন রঙ্গিন মাছ পালন শুধু পানি ভরে মাছ ছেরে দেওয়া, এটি একটি সম্পুর্ণ
ভুল ধারণা। কিন্তু বাস্তবে অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন নেওয়া একটি ধারাবাহিক প্রকিয়া,
যা নির্ভর করে মাছের সঠিক খাদ্য,পানির গুণগত মান, স্বাস্থ্য রক্ষনাবেক্ষন ও পরিবেশ
ব্যবস্থাপনার উপর। নিচে অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন নেওয়া ও পরিচর্যার নিয়ম
পোস্ট সূচিপত্র আকারে উপস্থাপন করা হলো।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন
- অ্যাকুরিয়ামের সঠিক সাইজ নির্বাচন
- পানি প্রস্তুত করা
- সঠিক ফিল্টার স্থাপন করা
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
- আলো ব্যবস্থাপনা
- উপযুক্ত খাদ্য সরবরাহ
- পানির মান বজায় রাখা
- মাছের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ
- নতুন মাছ যোগ করার নিয়ম
- মাছ যত্নের কিছু অতিরিক্ত টিপস
১. অ্যাকুরিয়ামের সঠিক সাইজ নির্বাচন
অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন এর প্রথম হলো ট্যাঙ্ক এর আকার নির্বাচন করা। একটি
নতুন অ্যাকুরিয়ামের আকার খুব ছোট না হওয়াই ভালো, অন্তত মাছের পর্যাপ্ত
পরিমাণ সাঁতার কাটার জাইগা দেওয়া ও পানির গুনগত মান ঠিক রাখার জন্য অত্যন্ত
জরুরী। নতুনদের জন্য মোটামুটি ২০-৩০ লিটার এর অ্যাকুরিয়াম দিয়ে শুরু করাই
ভাল। এতে মাছ পর্যাপ্ত সাঁতার কাটার স্থান ও পাবে এবং পানির মানও তুলনামূলক
স্থিতিশীল থাকবে।
২. পানি প্রুস্তুত করা
অ্যাকুরিয়ামে মাছ ছারার আগে পানি প্রস্তুত করা অত্যন্ত জরুরী। বাসা বাড়ির
কলের পানিতে সাধারণত ক্লোরিন অন্যান ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রবণ থাকে যা মাছের
জন্য ক্ষতিকর। সেজন্য পানি অ্যাকুরিয়ামে দেওয়ার আগে
ডিক্লোরিনেটর ব্যবহার করতে হবে অথবা ২৪ ঘন্টা বালটি বা পাত্রে রেখে
ক্লোরিন মুক্ত করতে হবে। এছারাও পানির pH, হার্ডনেস এবং তাপমাত্রা মাছের
প্রজাতি হিসেবে ঠিক করতে হবে।
৩. ফিল্টার বা পরিশোধন ব্যবস্থাপনা
অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন এর আরো একটি গুরুতপুর্ণ অংশ পরিশোধন বা ফিল্টার।
মাছের বাঁচিয়ে রাখার জন্য ফিল্টার অপরিহার্য । এটি পানিতে থাকা ময়লা, খাবারের
অবশিষ্ট ও বর্জ্য পরিস্কার করে।
মূলত তিন ধরনের ফিল্টার ব্যবহার করা হয় -
- পাওয়ার ফিল্টার ঃ এই ফিল্টার সাধারণত ১৫ওয়াট এর হয়ে থাকে, অক্সিজেন সরবরাহ এবং পানির ময়লা শোধনে খুব কাজ করে। এটি ঘন্টায় ৮০০ লিটার পর্যন্ত পানি পরিস্কার করতে পারে।
- মেকানিক্যাল ফিল্টার ঃ পানি বা বায়ু থেকে কঠিন ময়লা শোধন করে।
- বায়োলজিক্যাল ফিল্টার ঃ উপকারী ব্যাকটেরিয়া দিয়ে অ্যামোনিয়া ও নাইট্রাইট ভেঙ্গে নাইট্রেটে পরিণত করে।
৪. তাপমাত্রা পর্যাবেক্ষন ও নিয়ন্ত্রণ
অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন নিতে এর জাত অনুযায়ী পানির তাপমাত্রা বজায় রাখা
আবশ্যিক।
মূলত ২ ধরনের মাছ এর জন্য পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
- ট্রপিকাল মাছ ঃ ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালো থাকে।
- গোল্ডফিস বা ঠান্ডা পানির মাছ ঃ ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই উপযোগী।
এবং সবচেয়ে ভালো হয় যদি একটি হিটার বা তাপমাত্রা পর্যাবেক্ষন কিট ব্যবহার করে
লক্ষ রাখা যায়।
৫.আলো সরবরাহের ব্যবস্থাপনা
অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন নিতে আলো প্রদান একটি বাঞ্ছনীয় পদক্ষেপ। সাধারণত আলো
মাছের প্রাকৃতিক রং উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে এবং একটি প্লান্টেড অ্যাকুরিয়ামে
জীবন্ত গাছের জন্য খুব ভালো ফলাফল প্রদান করে থাকে। তবে অতিরিক্ত আলো দেওয়া ও
উচিৎ নয়, এতে অ্যাকুরিয়ামে শৈবাল
(algae) বৃদ্ধির কারন হতে পারে, তাই ৮-১০ ঘণ্টার বেশি আলো জ্বালানো উচিৎ নয়।
৬. সঠিক খাদ্য সরবরাহ
সঠিক খাদ্য সরবরাহ অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন নিতে গুরুতপুর্ণ ভূমিকা পালন
করে। অতিরিক্ত খাবার দেওয়ার ফলে মাছের হজম শক্তিতে ব্যঘাত ঘটতে পারে, এজন্য
মাছকে দিনে ১-২ বার অল্প পরমাণে খবার দিতে হবে, যা ২-৩ মিনিটে শেষ হয় । বাজারে
ফ্লেক, ফ্রোজেন, ও লাইভ ফুড পাওা যায়। মাছের প্রজাতি অনুযায়ী সঠিক খাবার বেছে
নিতে হবে। নিচে ধারণা দেওয়া হলো কেমন মাছের কেমন খাবার
হতে পারে।
মাছের নাম | খাবারের নাম |
---|---|
গোল্ডফিশ | পিলেট ও সবজি ভিত্তিক |
বেটা মাছ | প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার |
টেট্রা বা গাপ্পি | ফ্লেক ফুড উপযোগী |
৭.পানির মান স্থিতিশীল রাখা
পানি পরিবর্তন অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন নেওয়ার একটি উল্লেখযগ্য ধাপ।
প্রতি সপ্তাহে পানির মান ঠিক রাখতে ২০-৩০ শতাংশ পানি পরিবর্তন করা ভালো। এতে
পানির দূষন কমে ও অ্যামোনিয়া এবং নাইট্রাইটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। নতুন পানি
দেওয়ার পূর্বে পানিতে অবশ্যই ডিল্কোরিনেটর ব্যবহার করতে হবে।
৮.মাছের স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ রাখা
প্রতিদিন মাছের চালচলন এর দিকে লক্ষ রাখতে হবে। মাছ যদি খাবার না খায়, বা সাঁতার
কাটতে পারছে না, বা কোথাও গুটিশুটি হয়ে বসে আছে কিনা বা মাছের শরীরে কোথাও সাদা
দাগ দেখা যাচ্ছে কিনা তা লক্ষ রাখতে হবে মূলত এগুলো লক্ষন মাছের অসুস্থতার কারণ
হতে পারে। রোগগুলোর মধ্য ইচ (Ich), ফিন রট, ফাঙ্গাল ইনফেকশন ইত্যাদি। এগুলো রোগ
হলে মাছকে অবশ্যই আলাদা যায়গায় সরিয়ে নিয়ে
চিকিৎসা করতে হবে।
৯. নতুন মাছ অ্যাকুরিয়ামে যোগ করার নিয়ম
সাধারণত নতুন মাছ সরাসরি অ্যাকুরিয়ামে ছাড়া ঠিক না। মাছকে নতুন ট্যাঙ্ক এ ছারার
আগে ১-২ সপ্তাহ
কোয়ারেন্টাইন ট্যাঙ্কে রেখে তাদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে, কারণ মাছের যদি
আগে থেকেই রোগ বালাই থাকে তাহলে সেটি অ্যাকুরিয়ামের অন্যান্য মাছের মৃত্যুর কারণ
হতে পারে।
১০. অতিরিক্ত কিছু যত্নের টিপস
- শৈবাল বেশি হলে আলো কম প্রদান করতে হবে এবং বেশি শৈবাল দেখা দিলে শৈবালভুক মাছ যোগ করুন।
- মাছের পরিমাণ বেশি রাখা যাবে না অ্যাকুরিয়ামের সাইজ অনুযায়ী মাছ রাখতে হবে।
- নিয়মিত গ্লাস পরিষ্কার করতে হবে।
- পানিতে অতিরিক্ত মেডিসিন দেওয়া থেকে বিরত থাক্তে হবে
- লাইভ প্লান্ট থাকলে সেগুলোর যত্ন নিতে হবে।
উপসংহার ঃ
অ্যাকুরিয়ামের মাছের যত্ন নেওয়া শুধুমাত্র একটি শখ নয় বরংচ এটি একটি দায়িত্ব।
সঠিক পরিবেশ, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, পানি পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত
পর্যবেক্ষন এর মাধ্যমে আপনি আপনার মাছকে একটি সুস্থ জীবনযাপনে সহায়তা করতে পারেন।
মনে রাখবেন মাছ ভালোবাসা ও যত্নের উপর নির্ভর করে। তাই চেস্টা করুন প্রতিদিন সময়
দিতে, মাছের সাথে বন্ধুত্ব করুন, এভাবেই আপনার অ্যাকুরিয়াম হবে ঘরের একটি জীবন্ত
ও মনোমুগ্ধকর অংশ।
আরও পড়ুন ঃ
ইনফোনেস্টইনে
ইনফোনেস্টইনের শর্তাবলী মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট পর্যাবেক্ষন করা হয়।
comment url