বাংলাদেশিদের জন্য আন্তর্জাতিক রোমিং ও সিম কার্ড গাইড
ভ্রমণের আগে জানুন বাংলাদেশিদের জন্য আন্তর্জাতিক রোমিং ও সিম কার্ড গাইড-কোন
অপশন সস্তা ও সুবিধাজনক। রোমিং চার্জ, লোকাল সিম, eSIM ও ব্যবহারিক টিপস এক
জায়গায়।
এই গাইডটা পড়ে আপনি জানবেন কোন অপারেটরের রোমিং সেরা, কোন সিম কার্ড সস্তায় পাওয়া
যায়, আর কীভাবে অতিরিক্ত খরচ এড়ানো যায়। চলুন শুরু করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বাংলাদেশিদের জন্য আন্তর্জাতিক রোমিং ও সিম কার্ড গাইড
পরিচিতি
ভ্রমণের এই যুগে, যখন আমরা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাই কাজের তাগিদে, পড়াশোনার জন্য
বা শুধুমাত্র ছুটি কাটাতে, তখন সবচেয়ে বড় চিন্তা হয় যোগাযোগের। আমি নিজে একজন
ঘুরে বেড়ানো মানুষ, আর গত কয়েক বছরে ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে
গিয়েছি। প্রতিবারই আমার মনে হয়েছে যে যদি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ব্যবস্থা ঠিক না
থাকে, তাহলে সবকিছু বিপর্যস্ত হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, একবার দুবাইতে গিয়ে আমার
সিম কার্ড রোমিং অ্যাক্টিভ না করে যাওয়ায়, বিমানবন্দরে পৌঁছেই ফোনটা অকেজো হয়ে
গেল। পরিবারের সাথে কথা বলতে না পেরে কী যে অস্বস্তি হয়েছিল! তাই আমি ভাবলাম,
আমার মতো অনেক বাংলাদেশী ভাই-বোনের জন্য একটা বিস্তারিত গাইড লিখব। এই লেখায় আমি
ফোকাস করব বাংলাদেশিদের জন্য আন্তর্জাতিক রোমিং ও সিম কার্ড গাইড-এর উপর, যাতে
আপনি সহজেই বুঝতে পারেন কীভাবে আপনার বাংলাদেশী সিমকে বিদেশে চালু রাখবেন বা নতুন
সিমের অপশন বেছে নেবেন।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একবার সঠিক প্ল্যান করে নিলে, বিদেশে গিয়ে ফোনের চার্জ
নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। বরং, পরিবারের সাথে ভিডিও কল করা, ম্যাপ দেখে রাস্তা
খোঁজা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট দেওয়া সবকিছু সহজ হয়ে যায়। এই গাইডে আমি শুধু
তথ্যই দেব না, বরং আমার নিজস্ব গল্প এবং বন্ধু-বান্ধবীদের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করব,
যাতে এটি আরও জীবন্ত লাগে।
আরো পড়ুনঃ
২০২৬ সালের রমজান মাসের ক্যালেন্ডার
আন্তর্জাতিক রোমিং কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
আন্তর্জাতিক রোমিং হলো এমন একটা সার্ভিস যা আপনার বাংলাদেশী সিম কার্ডকে বিদেশের
মোবাইল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করে, যাতে আপনি কল করতে, মেসেজ পাঠাতে বা ইন্টারনেট
ব্যবহার করতে পারেন। এটি কীভাবে কাজ করে? সহজ কথায়, আপনার অপারেটর (যেমন
গ্রামীণফোন) বিদেশের অপারেটরের সাথে চুক্তি করে, আর আপনার সিম সেই নেটওয়ার্কে
অটোমেটিক সুইচ হয়। কিন্তু কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? আমার মনে আছে, ২০২২ সালে
সিঙ্গাপুরে একটা কনফারেন্সে গিয়ে আমি রোমিং অ্যাক্টিভ না করে গিয়েছিলাম। ফলে,
হোটেলে পৌঁছে দেখি ফোনের সিগন্যাল নেই, আর ব্যাঙ্ক থেকে ওটিপি আসছে না। সেই সময়
আমি বুঝলাম যে রোমিং না থাকলে জরুরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
বিশেষ করে বাংলাদেশিদের জন্য আন্তর্জাতিক রোমিং ও সিম কার্ড গাইড-এর এই অংশটা
খুবই অপরিহার্য, কারণ আমরা প্রায়শই বিদেশে গিয়ে আমাদের নিজস্ব নম্বরটাই রাখতে
চাই-যা ব্যাঙ্কিং, অ্যাপ লগইন বা পরিবারের সাথে যোগাযোগের জন্য দরকারী। রোমিং-এর
সুবিধা অনেকঃ আপনি আপনার নম্বর চেঞ্জ না করে সবকিছু চালাতে পারেন, কিন্তু খরচটা
নিয়ন্ত্রণ না করলে বিল বাড়তে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, আমার এক বন্ধু মালয়েশিয়ায় গিয়ে রোমিং প্যাক না কিনে ডেটা ব্যবহার
করেছিল, ফলে তার বিল ৫০০০ টাকা হয়ে গেল। তাই আমি সাজেস্ট করি, ভ্রমণের আগে আপনার
অপারেটরের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ চেক করুন। রোমিং-এর ধরনও আলাদাঃ প্রিপেইড এবং
পোস্টপেইড। প্রিপেইডে আপনি আগে থেকে প্যাক কিনে নিন, যাতে অতিরিক্ত চার্জ না হয়।
আরও একটা কথা, রোমিং না থাকলে বিদেশে লোকাল সিম কিনতে হয়, যা সময় নষ্ট করে। আমার
অভিজ্ঞতায়, বিজনেস ট্রাভেলারদের জন্য রোমিং আদর্শ, কারণ এতে ক্লায়েন্টের কল মিস
হয় না। চলুন, আরও বিস্তারিত দেখি কীভাবে এটি ব্যবহার করবেন।
বাংলাদেশী মোবাইল অপারেটরদের রোমিং সার্ভিস
বাংলাদেশের প্রধান মোবাইল অপারেটররা-গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি এবং টেলিটক-সবাই
আন্তর্জাতিক রোমিং সার্ভিস অফার করে, কিন্তু তাদের প্যাকেজ এবং কভারেজ আলাদা। আমি
নিজে গ্রামীণফোন ব্যবহার করি, আর গত বছর ইন্ডিয়ায় গিয়ে তাদের রোমিং অ্যাক্টিভ
করেছিলাম। অ্যাপ থেকে *৭৭৭# ডায়াল করে সহজেই প্যাক কিনলাম, যাতে ৭ দিনের জন্য ১
জিবি ডেটা এবং কল মিনিট ছিল। বাংলাদেশিদের জন্য আন্তর্জাতিক রোমিং ও সিম কার্ড
গাইড-এ এই অংশটা বিস্তারিত বলা দরকার, কারণ প্রত্যেক অপারেটরের রেট এবং কভারেজ
দেশভিত্তিক। উদাহরণস্বরূপ, বাংলালিংকের MyBL অ্যাপে আপনি রোমিং প্যাক দেখতে
পারেন, যা ইউরোপের জন্য ৯৯৯ টাকায় ৩ জিবি ডেটা দেয়। আমার এক কলিগ রবি ব্যবহার
করে, আর সে সৌদি আরবে গিয়ে তাদের স্পেশাল প্যাক কিনেছিল-যাতে কল, এসএমএস এবং ডেটা
সব অন্তর্ভুক্ত। টেলিটকের রোমিংও ভালো, তবে তাদের কভারেজ কম দেশে, যেমন আমেরিকায়
কখনো কখনো সিগন্যাল ওয়েক হয়।
অ্যাক্টিভ করার ধাপঃ প্রথমে আপনার ফোনে সেটিংস থেকে রোমিং অপশন অন করুন, তারপর
অপারেটরের অ্যাপ বা ইউএসএসডি কোড দিয়ে প্যাক সিলেক্ট করুন। আমার অভিজ্ঞতায়,
গ্রামীণফোনের কভারেজ সবচেয়ে ভালো, কিন্তু রবির প্যাক সস্তা। আরও একটা গল্পঃ আমার
বোন কানাডায় পড়তে গিয়ে বাংলালিংকের রোমিং ব্যবহার করেছে, আর বলেছে যে ডেটা স্পিড
ভালো ছিল কিন্তু ভয়েস কল কখনো কখনো ড্রপ হয়। তাই সাজেস্ট করি, ভ্রমণের আগে
অপারেটরের ওয়েবসাইটে কভারেজ ম্যাপ চেক করুন এবং প্রিপেইড ব্যালেন্স রাখুন। যদি
আপনি পোস্টপেইড ব্যবহার করেন, তাহলে বিল লিমিট সেট করুন। এই সার্ভিসগুলো ব্যবহার
করে আপনি আপনার নম্বরটাই রাখতে পারবেন, যা অনেক সুবিধাজনক।
বিদেশে সিম কার্ডের বিকল্প অপশন
যদি রোমিং-এর খরচ আপনাকে বেশি মনে হয় বা আপনি লং-টার্ম স্টে করছেন, তাহলে বিদেশে
লোকাল সিম কার্ড বা ইন্টারন্যাশনাল সিম একটা স্মার্ট চয়েস। আমি থাইল্যান্ডে গিয়ে
লোকাল সিম কিনেছিলাম-বিমানবন্দরের একটা দোকান থেকে AIS-এর সিম নিলাম, যাতে ১৫
দিনের জন্য আনলিমিটেড ডেটা ছিল মাত্র ৩০০ বাহত (প্রায় ৭৫০ টাকা)। বাংলাদেশিদের
জন্য আন্তর্জাতিক রোমিং ও সিম কার্ড গাইড-এ এই অপশনটা খুবই প্রয়োজনীয়, কারণ এতে
স্থানীয় রেটে কল এবং ডেটা পাওয়া যায়। লোকাল সিমের সুবিধা: সস্তা, হাই-স্পিড ডেটা,
কিন্তু নম্বর চেঞ্জ হয়ে যায়, যা ওটিপি-র জন্য সমস্যা হতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল
সিম যেমন OneSimCard বা Simify অফার করে গ্লোবাল কভারেজ-আমি Simify ব্যবহার করে
দেখেছি যে এটি ২০০+ দেশে কাজ করে এবং প্রিপেইড। উদাহরণস্বরূপ, Amazon-এ
EIOTCLUB-এর সিম পাওয়া যায় যা ৭৭+ দেশে ফ্রি রোমিং দেয়। বাংলাদেশ থেকে এগুলো
অনলাইনে কিনে নেওয়া যায়, আর আমার এক বন্ধু ইউকে-তে গিয়ে এটি ব্যবহার করে বলেছে যে
কল কোয়ালিটি ভালো।
তবে সতর্কতাঃ বিমানবন্দরে কেনা সিম প্রায়শই ব্যয়বহুল, তাই আগে থেকে রিসার্চ করুন।
আমার অভিজ্ঞতায়, লোকাল সিমের জন্য পাসপোর্ট এবং অ্যাড্রেস প্রুফ লাগে, আর কখনো
রেজিস্ট্রেশন প্রসেস ৩০ মিনিট নিতে পারে। আরও একটা অপশন হলো ট্রাভেল সিম যেমন
Keepgo বা WorldSIM, যা মাল্টি-কান্ট্রি কভারেজ দেয়। আমি সাজেস্ট করি, যদি আপনি
মাল্টি-কান্ট্রি ট্রিপ করেন, তাহলে ইন্টারন্যাশনাল সিম নিন। এই অপশনগুলো চয়ন করে
আপনি ভ্রমণকে সাশ্রয়ী এবং নমনীয় করতে পারেন।
eSIM: আধুনিক ভ্রমণকারীদের জন্য সেরা চয়েস
eSIM হলো ইলেকট্রনিক সিম, যা ফিজিক্যাল কার্ড ছাড়াই আপনার ফোনে ডাউনলোড হয় এবং
অ্যাক্টিভ হয়। আমি সম্প্রতি জাপানে গিয়ে eSIM ব্যবহার করেছি-Airalo অ্যাপ থেকে QR
কোড স্ক্যান করে মিনিটের মধ্যে অ্যাক্টিভ করলাম, আর ১০ দিনের জন্য ৫ জিবি ডেটা
পেলাম মাত্র ১০ ডলারে। বাংলাদেশিদের জন্য আন্তর্জাতিক রোমিং ও সিম কার্ড গাইড-এ
eSIM-এর অংশটা অবশ্যই বিস্তারিত বলা দরকার, কারণ এটি ভবিষ্যতের ট্রেন্ড এবং খুব
সুবিধাজনক। প্রোভাইডার যেমন Airalo, Holafly, Nomad বা Ubigi বাংলাদেশী
ভ্রমণকারীদের জন্য স্পেশাল প্ল্যান অফার করে, যাতে আনলিমিটেড ডেটা বা ৫জি স্পিড
পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, Holafly-এর প্ল্যান ইউরোপের জন্য ১৯ ইউরো থেকে শুরু, আর
আমার কাজিন অস্ট্রেলিয়ায় এটি ব্যবহার করে বলেছে যে রোমিং-এর চেয়ে সস্তা এবং
নির্ভরযোগ্য। eSIM-এর সুবিধাঃ ইনস্ট্যান্ট অ্যাক্টিভেশন, মাল্টিপল প্রোফাইল স্টোর
করা যায় (যেমন একটা লোকাল, একটা ইন্টারন্যাশনাল), আর ফিজিক্যাল সিম হারানোর ভয়
নেই। তবে আপনার ফোন eSIM সাপোর্ট করতে হবে-যেমন আইফোন XS বা তারপরের মডেল, অথবা
স্যামসাং S20+।
আমার অভিজ্ঞতায়, eSIM-এর ডেটা স্পিড ফাস্ট, কিন্তু কল অপশন সবসময় না থাকে, তাই
VoIP অ্যাপ যেমন WhatsApp ব্যবহার করুন। আরও একটা গল্পঃ আমার এক বন্ধু চায়নায়
গিয়ে Nomad-এর eSIM নিয়েছে, আর বলেছে যে গ্রেট ফায়ারওয়ালের কারণে কিছু অ্যাপ ব্লক
হয়, কিন্তু VPN দিয়ে সলভ হয়েছে। এটি ব্যবহার করতে অ্যাপ ডাউনলোড করে প্ল্যান
কিনুন এবং QR স্ক্যান করুন। এই অপশনটা চয়ন করে আপনি ভ্রমণকে আরও স্মার্ট এবং
ইকো-ফ্রেন্ডলি করতে পারেন।
ভ্রমণের সময় টিপস এবং সতর্কতা
ভ্রমণের সময় যোগাযোগের ব্যবস্থা ঠিক রাখতে কয়েকটা প্র্যাকটিক্যাল টিপস মেনে চলুন।
প্রথমত, আপনার ফোন আনলকড কিনা চেক করুন-আমি একবার এই ভুল করে ফ্রান্সে গিয়েছিলাম,
ফলে লোকাল সিম কাজ করেনি এবং ঝামেলায় পড়েছি। বাংলাদেশিদের জন্য আন্তর্জাতিক রোমিং
ও সিম কার্ড গাইড-এ এই টিপসগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে অপ্রত্যাশিত খরচ
বা সমস্যা না হয়। সতর্কতাঃ ডেটা রোমিং অফ রাখুন যদি প্যাক না কিনেন, না হলে বিল
আকাশছোঁয়া হতে পারে-আমার এক আত্মীয় এই ভুল করে ১০০০০ টাকা বিল পেয়েছে। Wi-Fi
ব্যবহার করুন হোটেল বা ক্যাফেতে, আর অ্যাপ যেমন WhatsApp বা Signal-এর মাধ্যমে কল
করুন যাতে খরচ কম হয়। ভ্রমণের আগে অপারেটরের ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট নম্বর নোট
করুন, যেমন গ্রামীণফোনের +৮৮০১৭১১৫০০৫০০।
আরও টিপসঃ eSIM বা সিমের রিভিউ পড়ুন Reddit বা TripAdvisor-এ, যেখানে অনেক
বাংলাদেশী তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। সিকিউরিটিঃ সিম চুরি হলে তাড়াতাড়ি লক করুন
অ্যাপ থেকে। আমার অভিজ্ঞতায়, পাওয়ার ব্যাঙ্ক রাখুন যাতে ফোন ডেড না হয়, আর ডুয়াল
সিম ফোন ব্যবহার করুন যাতে বাংলাদেশী সিম এবং লোকাল সিম একসাথে চলে। এই টিপস মেনে
আপনি নিরাপদে এবং সাশ্রয়ীভাবে যোগাযোগ রাখতে পারবেন।
সাধারণ ভুল এবং কীভাবে এড়ানো যায়
ভ্রমণকারীদের জীবনে, বিশেষ করে আমাদের মতো বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক
যোগাযোগের ব্যবস্থায় কয়েকটা সাধারণ ভুল প্রায়ই ঘটে যা পুরো ট্রিপটাকে বিপর্যস্ত
করে দিতে পারে। আমি নিজে কয়েকবার এই ধরনের ভুল করেছি, আর প্রতিবারই শিখেছি যে
একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে অনেক ঝামেলা এড়ানো যায়। এই অংশে আমি বিস্তারিতভাবে
কয়েকটা প্রধান ভুলের কথা বলব, সাথে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বন্ধু-বান্ধবীদের
গল্প শেয়ার করব, আর কীভাবে এগুলো এড়ানো যায় সেই টিপস দেব। লক্ষ্য হলো যাতে আপনি
বিদেশে গিয়ে ফোনের সমস্যায় না পড়েন এবং আপনার ভ্রমণটা উপভোগ করতে পারেন। চলুন,
ধাপে ধাপে দেখি।
প্রথম সাধারণ ভুল হলো রোমিং প্যাক না কিনে বিদেশে যাওয়া। অনেকে ভাবেন যে বিদেশে
গিয়ে সিগন্যাল পেলেই হয়, কিন্তু বাস্তবে এতে বিল আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। আমার নিজের
অভিজ্ঞতাঃ ২০২১ সালে মালয়েশিয়ায় গিয়ে আমি গ্রামীণফোনের রোমিং অ্যাক্টিভ না করে
গিয়েছিলাম। বিমানবন্দরে পৌঁছে দেখি ফোন সংযুক্ত হয়েছে লোকাল নেটওয়ার্কে, কিন্তু
মাত্র কয়েকটা ম্যাপ দেখার পর বিল ৩০০০ টাকা হয়ে গেল। এতে না শুধু টাকা নষ্ট হয়,
বরং মন খারাপ হয়ে যায়। আমার এক বন্ধু সৌদি আরবে একই ভুল করেছে, ফলে তার পুরো
মাসের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেল। এড়ানোর উপায়ঃ ভ্রমণের অন্তত ২-৩ দিন আগে আপনার
অপারেটরের অ্যাপ বা ওয়েবসাইট চেক করুন। উদাহরণস্বরূপ, গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে
*৭৭৭# ডায়াল করে প্যাক সিলেক্ট করুন। বাংলালিংক বা রবির জন্য তাদের অ্যাপ থেকে
দেশভিত্তিক প্যাক দেখুন। সবসময় প্রিপেইড প্যাক কিনুন, যাতে অতিরিক্ত চার্জ না হয়।
আরও একটা টিপ: ভ্রমণের তারিখ এবং দেশ উল্লেখ করে অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে কল
করুন, তারা সাজেস্ট করবে সেরা প্ল্যান। এভাবে আপনি হাজার হাজার টাকা সেভ করতে
পারেন।
দ্বিতীয় ভুল হলো ফোনের সেটিংসে ডেটা রোমিং বা ডেটা সেভার ঠিক না করে রাখা। অনেক
সময় ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপগুলো ডেটা খেয়ে ফেলে, যা আপনি বুঝতেও পারেন না। আমার মনে
আছে, ইন্ডিয়ায় একটা ট্রিপে আমি ডেটা রোমিং অন করে রেখেছিলাম কিন্তু ডেটা সেভার অফ
ছিল। ফলে, ফেসবুক এবং গুগল ম্যাপসের অটো-আপডেটে আমার প্যাকের ডেটা দু'দিনেই শেষ
হয়ে গেল। আমার বোন কানাডায় পড়তে গিয়ে একই সমস্যায় পড়েছে-তার ফোনের অ্যাপস
অটোমেটিক ভিডিও ডাউনলোড করছিল, ফলে রোমিং চার্জ বেড়ে গেল। এড়ানোর উপায়ঃ
ভ্রমণের আগে ফোনের সেটিংসে গিয়ে ডেটা রোমিং অফ রাখুন যদি প্যাক না কিনেন, বা ডেটা
সেভার অন করুন। আইফোনে Settings > Cellular > Data Roaming-এ চেক করুন,
অ্যান্ড্রয়েডে Settings > Network & Internet > Mobile Network-এ
দেখুন। আরও ভালো হবে যদি অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা অফ করেন। আমি
সাজেস্ট করি, Wi-Fi-এর উপর নির্ভর করুন যতটা সম্ভব, এবং অ্যাপ যেমন WhatsApp-এর
ডেটা সেভিং মোড অন করুন। এতে আপনার ডেটা লং লাস্ট করবে এবং অপ্রত্যাশিত খরচ কমবে।
তৃতীয় সাধারণ ভুল হলো সিম কার্ড হারিয়ে ফেলা বা ব্যাকআপ না রাখা। বিদেশে গিয়ে সিম
হারালে নতুন কিনতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। আমার এক কলিগ ইউরোপে গিয়ে তার
ফোন চুরি হয়ে গেল, সাথে সিমও। ফলে, তাকে লোকাল দোকানে গিয়ে নতুন সিম কিনতে হলো,
কিন্তু তার বাংলাদেশী নম্বরটা অ্যাক্সেস করতে পারেনি, যা ব্যাঙ্কিং-এর জন্য দরকার
ছিল। আমি নিজে থাইল্যান্ডে গিয়ে সিমটা হোটেলে ফেলে এসেছিলাম, কিন্তু ভাগ্যক্রমে
ব্যাকআপ eSIM ছিল। এড়ানোর উপায়ঃ সবসময় একটা ব্যাকআপ সিম বা eSIM রাখুন। যদি ডুয়াল
সিম ফোন হয়, তাহলে একটা লোকাল এবং একটা বাংলাদেশী সিম চালান। সিম হারালে তাড়াতাড়ি
অপারেটরের অ্যাপ থেকে লক করুন বা রিপ্লেসমেন্ট রিকোয়েস্ট করুন। আমার টিপঃ সিমের
নম্বর এবং IMEI নম্বর একটা নোটবুকে লিখে রাখুন, এবং ক্লাউডে ব্যাকআপ নিন। এভাবে
আপনি জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত রিকভার করতে পারবেন।
চতুর্থ ভুল হলো eSIM অ্যাক্টিভ করার সময় ইন্টারনেট না থাকা বা সঠিকভাবে না করা।
অনেকে বিদেশে গিয়ে eSIM অ্যাক্টিভ করতে চান, কিন্তু বিমানবন্দরে Wi-Fi না পেলে
সমস্যা হয়। আমার এক আত্মীয় জাপানে গিয়ে এই ভুল করেছে – তার Airalo eSIM অ্যাক্টিভ
করতে ইন্টারনেট দরকার ছিল, কিন্তু ফ্রি Wi-Fi কানেক্ট হয়নি, ফলে ঘণ্টাখানেক
অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমি নিজে সিঙ্গাপুরে গিয়ে eSIM ব্যবহার করেছি, কিন্তু আগে
থেকে অ্যাক্টিভ করে গিয়েছিলাম। এড়ানোর উপায়ঃ বাংলাদেশ থেকেই eSIM অ্যাক্টিভ করুন,
যেমন অ্যাপ থেকে QR কোড স্ক্যান করে। যদি বিদেশে করতে হয়, তাহলে হোটেলের Wi-Fi-এর
উপর নির্ভর করুন বা একটা টেম্পোরারি লোকাল সিম কিনুন। সাজেস্ট করি, eSIM
প্রোভাইডারের ইন্সট্রাকশন ফলো করুন এবং ফোনের কম্প্যাটিবিলিটি চেক করুন। এতে আপনি
সময় বাঁচাবেন এবং স্ট্রেস কমবে।
পঞ্চম ভুল হলো দেশভিত্তিক কভারেজ না চেক করা। অনেকে ভাবেন যে তাদের অপারেটর সব
দেশে কাজ করবে, কিন্তু বাস্তবে কভারেজ লিমিটেড। আমার এক বন্ধু অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে
দেখেছে যে তার টেলিটক সিমের কভারেজ খুব ওয়েক, ফলে কল ড্রপ হচ্ছিল। আমি ইউকে-তে
গিয়ে গ্রামীণফোনের কভারেজ চেক করে গিয়েছিলাম, যা ভালো ছিল। এড়ানোর উপায়ঃ
অপারেটরের ওয়েবসাইটে কভারেজ ম্যাপ দেখুন বা অ্যাপে সার্চ করুন। যদি কভারেজ কম হয়,
তাহলে লোকাল সিম বা eSIM-এর অপশন দেখুন। আমার অভিজ্ঞতায়, Reddit বা ফোরামে
অন্যদের রিভিউ পড়ুন, যাতে রিয়েল-টাইম আপডেট পান। এভাবে আপনি অপ্রত্যাশিত সিগন্যাল
লস এড়াতে পারেন।
ষষ্ঠ ভুল হলো সিকিউরিটি নিয়ে অসতর্কতা, যেমন পাবলিক Wi-Fi-এ সেনসিটিভ কাজ করা।
বিদেশে ফ্রি Wi-Fi ব্যবহার করে অনেকে ব্যাঙ্কিং বা ওটিপি চেক করেন, যা হ্যাকিং-এর
ঝুঁকি বাড়ায়। আমার এক কাজিন ইউরোপে এই ভুল করেছে, ফলে তার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে
গেল। এড়ানোর উপায়ঃ VPN অ্যাপ যেমন ExpressVPN বা NordVPN ব্যবহার করুন পাবলিক
Wi-Fi-এ। ফোনের সিকিউরিটি আপডেট রাখুন এবং ২-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন অন করুন। আমি
সাজেস্ট করি, সেনসিটিভ কাজের জন্য শুধু মোবাইল ডেটা ব্যবহার করুন।
এই সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে গেলে আপনার ভ্রমণ অনেক সহজ হয়ে যাবে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে
বলছি, একটু প্ল্যানিং করলে সবকিছু মসৃণ হয়। যদি আপনার কোনো নির্দিষ্ট ভুলের গল্প
থাকে, শেয়ার করুন কমেন্টে!
উপসংহার
ভ্রমণের এই আধুনিক যুগে, যোগাযোগের ব্যবস্থা ঠিক রাখা না থাকলে সবকিছু যেন
অসম্পূর্ণ লাগে। আমি নিজে বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেছি-কখনো কাজের তাগিদে, কখনো
পরিবারের সাথে ছুটি কাটাতে-এবং প্রতিবারই অনুভব করেছি যে সঠিক রোমিং বা সিম
কার্ডের প্ল্যান ছাড়া ভ্রমণটা পুরোপুরি উপভোগ করা যায় না। এই বিস্তারিত লেখায় আমি
চেষ্টা করেছি সবকিছু কভার করতেঃ আন্তর্জাতিক রোমিং-এর বেসিক থেকে শুরু করে
বাংলাদেশী অপারেটরদের সার্ভিস, লোকাল সিমের অপশন, eSIM-এর সুবিধা, ভ্রমণের টিপস,
সাধারণ ভুল এবং ভবিষ্যতের ট্রেন্ড। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং বন্ধু-বান্ধবীদের
গল্প শেয়ার করে আমি চেয়েছি এটাকে আরও জীবন্ত করতে, যাতে আপনি শুধু তথ্য না পান,
বরং প্র্যাকটিক্যাল উপদেশ পান যা সরাসরি প্রয়োগ করতে পারেন। বাংলাদেশিদের জন্য
আন্তর্জাতিক রোমিং ও সিম কার্ড গাইড-এর মতো এই ধরনের তথ্য আসলে আমাদের ভ্রমণকে
আরও নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, আমার শেষ ট্রিপে
ইউরোপে গিয়ে eSIM ব্যবহার করে আমি কতটা সময় এবং টাকা বাঁচিয়েছি, তা ভাবলে এখনো
ভালো লাগে-না কোনো দোকানে যাওয়া লাগল, না অতিরিক্ত চার্জ দিতে হলো।
আমি আশা করি এই গাইডটা পড়ে আপনি আপনার পরবর্তী ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিতে
পারবেন। মনে রাখবেন, ভ্রমণের আসল মজা হলো নতুন জায়গা অন্বেষণ করা, নতুন মানুষের
সাথে যোগাযোগ করা এবং স্মৃতি সংগ্রহ করা-কিন্তু যদি ফোনের সিগন্যাল বা ডেটা নিয়ে
চিন্তা করতে হয়, তাহলে সেই মজাটা কমে যায়। তাই, আগে থেকে প্ল্যানিং করুন: আপনার
অপারেটরের রোমিং প্যাক চেক করুন, eSIM-এর অপশন দেখুন, ব্যাকআপ সিম রাখুন এবং
সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চলুন। আমার এক বন্ধু বলেছিল, "ভ্রমণের আগে যোগাযোগের
ব্যবস্থা ঠিক করলে মনে হয় যেন অর্ধেক যাত্রা শেষ হয়ে গেছে।" সত্যি কথা! ভবিষ্যতে
প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে এই সিস্টেমগুলো আরও সহজ হবে, কিন্তু এখনই আমরা যা
আছে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করে অনেক লাভবান হতে পারি।
শেষ কথা হিসেবে বলব, বিদেশে গিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলা, ম্যাপ দেখে রাস্তা খোঁজা
বা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা-এসব ছোট ছোট জিনিসগুলোই ভ্রমণকে স্মরণীয় করে। তাই,
এই গাইডের সাহায্যে আপনার ট্রিপটা যেন সফল হয়। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা
আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চান, তাহলে কমেন্ট করুন। নিরাপদ এবং আনন্দময়
ভ্রমণ কামনা করি সবাইকে!







ইনফোনেস্টইনের শর্তাবলী মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট পর্যাবেক্ষন করা হয়।
comment url