ইসলামিক হিজরি ক্যালেন্ডার মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনের মূল
ভিত্তি । ২০২৬ সালের আরবি ক্যালেন্ডার চাঁদের গতির উপর নির্ভর করে গঠিত হবে, যা
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে ভিন্ন । এই লক্ষে আমারা ২০২৬ সালের আরবি মাসগুলোর
তারিখ, তাদের তাৎপর্য এবং ব্যবহারিক দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
হিজরি ক্যালেন্ডারের ইতিহাস ও ভিত্তি
হিজরি সনের সূচনা ঘটে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে যখন মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনা
ত্যাগ করেন। ইসলামি চন্দ্রপঞ্জি চাঁদের স্থানান্তরের উপর নির্ভরশীল যার প্রতিটি
মাস ২৯ অথবা ৩০ দিনে শেষ হয়। এই ক্যালেন্ডারটি রমজান হজ্জ এবং ঈদের মত ধর্মীয়
কার্যক্রমের সময় নির্ধারণে ব্যবহিত হয়ে থাকে। এটি মূলত চন্দ্রভিত্তিক (Lunar
Calender) ক্যালেন্ডার, যেখানে যেখানে ১ মাসের শুরু নির্ধারণ হয় চাঁদ দেখার
মাধ্যমে। তবে ক্যালেন্ডারটি আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হয় খলিফা উমর (রা.) এর সময়।
একটি হিজরি বছর মোট ৩৫৪ ভা ৩৫৫ দিন। তাই এটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের (৩৬৫/৩৬৬
দিন) তুলনায় প্রায় ১০-১১ দিন ছোট।
হিজরি ক্যালেন্ডারের ১২ টি মাসের নাম ও বৈশিষ্ট্য
নিচে ২০২৬ সালের আরবি মাসগুলোর গ্রেগরিয়ান সমতুল্য তারিখ ও বিবরণ আলোচনা করা
হলো।
আরবি মাসের নাম |
শুরু (২০২৬) |
দিন সংখ্যা |
তাৎপর্য |
মুহাররম |
২০ জুলাই |
৩০ |
আশুরা পালিত হয় |
সফর |
১৯ আগস্ট |
২৯ |
ধর্মীয় ভ্রমণের মাস |
রবিউল আউয়াল |
১৭ সেপ্টেম্বর |
৩০ |
মহানবী সাঃ এর জন্মবার্ষিকী |
রবিউস সানি |
১৭ অক্টোবর |
২৯ |
ইসলামিক শিক্ষার মাস |
জুমাদাল উলা |
১৫ নভেম্বর |
৩০ |
কৃষি কর্মকাণ্ডের সময় |
জুমাদাস সানি |
১৫ ডিসেম্বর |
২৯ |
শীতকালীন প্রস্তুতি |
রজব |
১৩ জানুয়ারি |
৩০ |
মেরাজের স্মরণ |
শাবান |
১২ ফেব্রুয়ারি |
২৯ |
রমজান প্রস্তুতি |
রমজান |
১২মার্চ |
৩০ |
রোজা ও কুরআন নাযিলের মাস |
শাওয়াল |
১১ এপ্রিল |
২৯ |
ঈদ উল ফিতর উদযাপন |
জিলকদ |
১০ মে |
৩০ |
হজ্জের প্রস্তুতির মাস |
জিলহজ |
৯ জন |
২৯/৩০ |
হজ্জ ও ঈদুল আজহা পালন |
তারিখগুলো আনুমানিক চাঁদ দেখার উপর পরিবর্তন হতে পারে।
বিস্তারিত আলোচনা
ইসলামী ক্যালেন্ডার মুসলমানদের অপরিহার্য একটি অংশ। আরবি মাসের
ক্যালেন্ডার ২০২৬ এ মুসলমানদের জন্য এমন কিছু দিন রয়েছে যা ব্যাক্তিগত ও
সামাজিক জীবনের নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয় । উপরের তালিকাটিতে ২০২৬ সনের
আনুমানিক আরবি মাস এবং এর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলমানদের
ধর্মীয় উৎসব, ইবাদত ও বিশেষ দিনসূমহ চাঁদ দেখার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। তাই
আরবি ক্যালেন্ডার শুধু একটি সময় গণনার মাধ্যম নয়, বরং ইসলামি জীবনধারার একটি
অপরিহার্য অংশ হিসেবে ধরা হয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের (৩৬৫/৩৬৬ দিন)
তুলনায় প্রায় ১০-১১ দিন ছোট।
প্রতিটি আরবি মাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ঃ
মুহাররম ঃ
ইসলামি ক্যালেন্ডার এর প্রথম মাস মুহাররম অত্যন্ত পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ একটি মাস। কোরআন - হাদিস এর আলোকে এই
মাসের ফজিলত ও নেয়ামত মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুরাআনে ইরশাদ আছে,
" নিশ্চয় আল্লহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২ টি এর মধ্যে সম্মানিত" (সূরা আত -
তাওয়াব ৯ঃ৩৬)। আল্লাহর এই চারটি সম্মানিত মাসের মধ্য মুহাররম অন্তর্ভুক্ত। এই
মাসে হিংসা যুদ্ধ- সংঘাত মানা যা এর মর্যাদাকে তুলে ধরে। আশুরায় রোজার বিশেষ মর্যাদা হচ্ছে সয়ং নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন রমজানের
পরে সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা।
১০ মুহাররম আশুরা এই দিন রোজা রাখার নিয়ম ইসলামি যুগ থেকেই
ছিলো নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজে রোজা রাখতেন এবং সহপাঠীদের কেও রোজা রাখার নির্দেশ
দিয়েছিলেন। হাদিসে এসেছে আশুরার এই রোজা পুর্ববর্তী ১ বছরের গুনাহ মাফের
ফযিলত প্রদান করে। ইসলামি বছরের প্রথম মাস হিসেবে মুহাররম মুসলিম ঐতিহের
প্রতীক। এই দিনে আদম (আ.) তওবা করেন বলে বর্ণিত আছে। ৬১ হিজরির ১০ মুহাররম
কারবালার প্রান্তরে হুসাইন (রা.) ও তার সাথীদের শাহাদাত ইসলামে গভীর শোকের
ঘটনা।শিয়া মুসলমানগণ এই দিনটিকে মাতমের ও ত্যাগের মাস বলে মেনে চলেন,
অন্যদিকে সুন্নিরা এই দিনটিকে রোজা ও ইবাদতের মাধ্যমে অর্জনের চেষ্টা করেন।
পবিত্র মাস বলে এই মাসে গুনাহ থেকে বিরত থাকা, দান- খয়রাত, কুরআন তিলাওয়াত
ইত্যাদিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সফর ঃ
ইসলামিক ক্যালেন্ডারে ২য় মাস সফর। এ মাসের ফযিলত ও ইবাদতের নির্দেশনা কুরআন
হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তবে কিছু ঘটনা ও প্রেক্ষাপট ইসলামি শিক্ষার
আলোকে বর্ণিত আছে। এই মাসকে প্রাক ইসলামি যুগের কুসংস্কার এর মাস বলে ধরা
হয়। প্রাক ইসলামি যুগে মানুষ সফর মাসকে অশুভ মনে করতো।তারা এই মাসে
ভাগ্যবিড়ম্ভনা, দুর্ভাগ্য বা যাত্রার বাধার আশংকা মনে করতো। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) এই কুসংস্কারকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, "এই মাসে কোনো অমঙ্গল নেই পেঁচার
ডাকেও কোনো অশুভ লক্ষণ নেই।" (সহিহ বুখারি ৫৭০৭)।
মূলত হিজরতের পর ২য় খলিফা উমর (রা.) - এর সময় সফর মাস থেকে হিজ্রি সন গণনা
শুরু হয়নি। বরং মুহাররমকে প্রথম মাস ধরা হয়। নবী (সা.) শেষ অসুখ এই মাসেই
দেখা দেই এবং পরবর্তীতে রবিউল আউয়ালে তার ইন্তিকালে পর্যবসিত হয়। খায়বারের
যুদ্ধ ও তাবুক অভিযানের প্রস্তুতি সফর মাসেই সংঘটিত হয়। সাধারণত এই মাসের
জন্য তেমন বিশেষ নির্দেশনা নাই তবে সারা মাস জুড়ে নফল রোজা রাখা, দান করা,
আমল করা, তওবা করা যায়। তবে এই মাসে ব্যাবসা বাণিজ্য, বিয়ে, ভ্রমণ এসব থেকে
বিরত থাকা এসব এ মাসের সাথে মিল রেখে করা বিদআত।
রবিউল আউয়াল ঃ
আরবি মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৬ ও ইসলামি হিজরি ক্যালেন্ডারের তৃতীয় মাস রবিউল
আওয়াল। এই মাসের প্রধান তাৎপর্য হচ্ছে নবী মোহাম্মদ (সা.) এর জন্ম, হিজরত ও
ইন্তেকাল সহ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা এর সাদৃশতা। কিন্তু এ মাসে কোন ফরজ বা সুন্নত
নামাজের বিধান কুরান হাদিসে উল্লেখ নেই। মূলত ধারণা করা হয় যে, নবী মুহাম্মদ (সা.) এই রবিউল আউয়াল (সোমবার) এই
মাসেই মক্কাই জন্মগ্রহন করেন। এই মাসে রাসুল (সা.) ভালোবাসা ও স্মরণে বেশি বেশি দরূদ শরীফ পাঠ, নফল ইবাদত, দান খয়রাত এবং
তার সুন্নাহ অনুসরণ করা হয়। যদিও এটি উৎসবের মাস নয়, তবুও ই মাসটি মুসলিমদের
জন্য আত্মিক পূর্ণ জাগরণের মাস এবং নবী (সা.) এর আদর্শ অনুসরণের মাস বলে বিবেচিত।
তবে কিছু ঐতিহাসিকবিদের এই নিয়ে মত পার্থক্য আছে। তিনি এই মাসেই ইন্তেকাল
করেন ১১ হিজরির ১২ রবিউল আউয়ালে, সেই জন্যই এই দিনটি মুসলিম সমাজে গভীর
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে স্মরণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে ১২ রবিউল আউয়ালকে
নবীজির জন্মদিন হিসেবে পালিত হয় । এর প্রক্ষিতে মিছিল, সমাবেশ, নাত-কবিতা
পাঠ, ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিছু আলেম দের ধারণা, এই দিনে
নবীজির আলোচনা ও তার শিক্ষা প্রচার করা যেতে পারে, যদি তা শরিয়তের সীমার
মধ্যে থাকে এবং অনর্থক কর্মকান্ড বা অপচয় এড়ানো যাই। রবিউল আউয়াল মাসের জন্য প্রচলিত কোন রোজা, নামাজ বা দোয়ার বিধান নেই। তবে
নফল ইবাদত ও কুরআন তেলাওয়াত সবার সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য।
রবিউস সানি ঃ
ইসলামী বিধানে এই মাসকে অন্য মাসের তুলনায় বিশেষ কোন কারণ উল্লেখ করা হয় নি।
অর্থাৎ ইসলামে "অত্যন্ত বরকতময়" বা বিশেষ ইবাদতের মাস হিসেবে কোনো নিদিষ্ট
ফরজ/সুন্নাহ ঘোষিত নেই। তবে মহররম, রমজান, রজব বা জিলহজ মাসের মত বিশেষ
মর্জাদাপূর্ণ না হলেও রবিউস সানি মাস ইবাদত ও নেক আমল বাড়ানোর মাস।
নামায, রোজা, কোরআন তেলওয়াত এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা
যায়।
তাই এ মাসেও সাধারণ ইসলামী নির্দেশনা অনুযায়ী ইবাদত বারানোই উত্তম যেমনঃ নফল
নামাজ,কোরআন পাঠ, ধ্যান তেলাওয়াত, তাওবাহ এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উপর দোয়াহ
ও সালাউত পাঠ করাসামাজিক ভাবে কিছু অঞ্চলে ব্যাক্তিগত ভাবে উদযাপিত হয়, কিন্তু তা শারিয়াহগত
বাধ্যতামূলক নয়; যদি পালন করতে হয় তবে কুরআন সুন্নাহর সীমার মধ্য রাখতে
হবে।
জুমাদাল উলা ঃ
এই মাসকেও (কোরআন বা সহিহ হাদিসে) বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয় নি। সাধারণ ইসলামিক
শিক্ষা অনুযায়ী ইমান ও আমল বৃদ্ধি করা - নফল নামাজ, কোরান পাঠ, তাওবা, সদাচরণ
ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে। দুর্বল আ কাল্পনিক উৎস থেকে প্রচারিত "বিশেষ বরকত" এড়িয়ে
চলতে হবে। সন্দেহ হলে আলেম বা ফতোয়া সংগঠনের কাছে জিজ্ঞাস করতে হবে। যদিও
নির্ধারিত ফজিলত বর্ণিত নেই, তবে এ মাসেও নফল নামায, রোজা, দোয়া ও কোরআন
তিলাওয়াত করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। এই মাসে সুন্নত ও নফল
ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম, কিছু হাদিস অনুযায়ী, যারা এই মাসে নেক আমল করে, তাদের
জন্য আল্লাহর রমত ও বরকত বৃদ্ধি পায়।
রজব ঃ
রজব হলো ইসলামিক ৪ টি পবিত্র মাসের একটি (আশহুরুল হুরুম) আল -কুরআনে (সূরা
তাওবা) এই ধরনের পবিত্র মাসের কথা উল্লেখ আছে, তাই এই মাসের মর্জাদা আছে।
রজবকে অন্য মাসের তুলনায় কোনো নতুন ইবাদত বা বিশেষ ফরজ/ সুন্নাহ ঘোষিত হয় নি
সেজন্য বৈধ প্রমাণ ছাড়া রোজা আযকার অনুসরণ করা উচিৎ নয়। সাধারণ আমন যেমন
নামজ, কোরআন তিলাওয়াত, সদকাহ মানুষের কল্যানে কাজ করা ও আল্লহর নৈকট্য ভাইতে
থাকা। রজব মাস হলো হিজরি ক্যালেন্ডারের একটি পবিত্র মাস। এটি ইবাদত , নেক
কাজ, দোয়া ও রোজার জন্য বিশেষভাবে বরকতময়। মুসলিম উম্মহর জন্য রজব মাস
আধ্যাত্নিক সচেতনতা ও নেক কাজের সুযোগ প্রদান করে।
শাবান ঃ
শাবান হলো রমজানের আগে ২ টি মাস। নবী (সা.) এই মাসে বেশি রোজা রাখতেন (বুখারী ও
মুসলিমে বর্ণিত)। শাবান মূলত রমজানের প্রস্তুতি ইমান- মজবুত করা, ইবাদত বাড়ানো,
কোরআন পাঠ, তওবা ও সদকাহ দিয়ে রমজানের জন্য আত্মাকে প্রস্তুত রাখা উত্তম।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, " শাবান মাসে আমার আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়,
তাই আমি চাই আমার আমলগুলো রোজার অবস্থায় পেশ হোক"।
শাবানকে রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে ধরা হয়। রমজান মাস আসার আগেই নিজেকে
আল্লাহর কাছে ত্যাগের এক মহিমান্বিত আত্মদানকে তুলে ধরা হয়। শাবান মাসের ১৫
তারিখ এর রাতকেই শবে বরাত বলা হয়। এ রাতে আল্লাহ তা' আলা বান্দাদের প্রতি বিশেষ
রহমত দান করেন এবং, অসংখ্য গুনাহ মাফ করে দেন। তাই এ রাতে ইবাদত করা অত্যন্ত
ফজিলতপূর্ণ।
আরবি (হিজরি) মাসের ক্যালেন্ডার – ২০২৬
নং |
আরবি নাম |
বাংলা উচ্চারণ |
ইংরেজি নাম |
হিজরি বছর |
গ্রেগরিয়ান ২০২৬ (আনুমানিক) |
১ |
رجب |
রজব |
Rajab |
১৪৪৭ |
জানুয়ারি |
২ |
شعبان |
শাবান |
Shaban |
১৪৪৭ |
ফেব্রুয়ারি |
৩ |
رمضان |
রমজান |
Ramadan |
১৪৪৭ |
মার্চ |
৪ |
شوال |
শাওয়াল |
Shawwal |
১৪৪৭ |
এপ্রিল |
৫ |
ذو القعدة |
জিলকদ |
Dhu al-Qa'dah |
১৪৪৭ |
মে |
৬ |
ذو الحجة |
জিলহজ |
Dhu al-Hijjah |
১৪৪৭ |
জুন |
৭ |
محرم |
মুহাররম |
Muharram |
১৪৪৮ |
জুলাই |
৮ |
صفر |
সফর |
Safar |
১৪৪৮ |
আগস্ট |
৯ |
ربيع الأول |
রবিউল আউয়াল |
Rabi-al-Awwal |
১৪৪৮ |
সেপ্টেম্বর |
১০ |
ربيع الآخر |
রবিউস সানি |
Rabi'ath-Thani |
১৪৪৮ |
অক্টোবর |
১১ |
جمادى الأولى |
জমাদিউল আউয়াল |
Jumada al-Ula |
১৪৪৮ |
নভেম্বর |
১২ |
جمادى الآخرة |
জমাদিউস সানি |
Jumada ath-Thaniyah |
১৪৪৮ |
ডিসেম্বর |
রমজান ঃ
রমজান মাস মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত সম্মানজনক এবং বরকতময় একটি সময়। আল্লাহ
তা' আলা কুরআনে এবং নবী করীম (সা.) এর হাদিসগুলতে এ মাসের বিশেষ গুরুত্ব ও
ফজিলত নিয়ে বার বার আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা' আলা বলেন "রমজান হচ্ছে সেই
মাস, যখন কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, এটি মানুসের জন্য পথনির্দেশক এবং সত্য ও
মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণের উপকরণ"।
এই মাসে আল্লাহ মুসলমানদের জন্য রোজা পালন ফরজ করেছেন, যা তাকওয়া অর্জনের একটি
গুরুত্তপুর্ণ মাধ্যম। "হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা রাখা ফরজ হয়েছে, যেমন
পুর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমারা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। এ
মাসেই মানবজাতির হেদায়েত এর জন্য আল্লাহ তা' আলা কোরআন মাজীদ নাজিল করেছেন। এ
জন্য আরবি মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৬ এ রমজান মাস খুব গুরুত্বপূর্ণ।
-
দোয়া কবুলের একটি বিশেষ সময় হচ্ছে ইফাতারের মূহুর্ত। রাসূল বলেছেনঃ
"রোজাদারদের জন্য দুইটি আনন্দ রয়েছে; একটি হলো ইফতারের সময় এবং অন্যটি
আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়।"
-
গুনাহ মাফের সুযোগ, হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে; "যে ব্যাক্তি ইমানের সাথে
আল্লহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য রমজান মাসে রোজা রাখবে, তার পুর্বের সমস্ত
গুলাহ মাফ করে দেওয়া হবে।"
-
রাসূল বলেন "যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়,
জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের বন্ধ করে রাখা হয়।
-
রমজান মাসের শেষ ১০ রাতের মধ্য একটি বিশেষ রাত হচ্ছে লাইলাতুল কদর, যা
হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচনা করা হয়।
-
রমজানের সময় রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ দরজা রয়েছে, যার নাম রাইয়ান,
শুধুমাত্র রোজা রাখা ব্যাক্তিরা এই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করার সুযোগ
পাবে।
রমজান মাস্টি হলো আত্মশুদ্ধির, তাকওয়া অর্জনের, কুরআনের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার,
এবং গুনাহ থেকে মুক্তির একটি অসাধারণ সুযোগ। এই পবিত্র মাসে আমাদের উচিৎ ইবাদত,
রোজা, তারাবি, কুরান,তিলাওয়াত,দান-সদকা এবং আল্লাহর জিকিরে অধিক মনোযোগ দেওয়া।
এভাবেই আরবি মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৬ মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে
পারে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
শাওয়াল ঃ
শাওয়াল মাস ইসলামিক ক্যালেন্ডারের দশম মাস যা রমজানের পরে আসে। রমজান
পরবর্তী শাওয়াল মুসলমানদের জন্য অতীব গুরুত্তপূর্ণ, কারণ এ মাসের মাধ্যমে মানুষ
আল্লহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে, অতিরিক্ত নফল ইবাদত করার সু্যোগ পাই
এবং আল্লাহর রহমত লাভের চেস্টা করে। রমজান মাসে আল্লহর দেয়া ইবাদতের
শিক্ষা শাওয়াল মাসে পূরণ করার সুযোগ আসে। এ সময়ে ঈদুল ফিতরের আনন্দের মাধ্যমে
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা যানানো হয়।
শাওয়ালের ছয়টি রোজা সম্পর্কে রাসূল বলেছেনঃ "যে ব্যাক্তি রমজানের রোজা পালন
করার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখে, তার জন্য সারাবছর রোজা রাখার মত সওয়াব দেওয়া হবে। এই মাসের
প্রথম দিনে মুসলিম উম্মাহ ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। আরবি মাসের ক্যালেন্ডার
২০২৬ এ শাওয়াল মাসের রোজা প্রমাণ করে যে, বান্দা শুধু রমজানেই নয়, সারা বছর
ইবাদতে অবিচল।
শাওয়াল মাসটি সত্যিই, আনন্দ,কৃতজ্ঞতা এবং এবাদতের সুন্দর সংমিশ্রণ। এই বিশেষ
মাসে শাওয়াল এর ছয়টি রোজা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য। তাই মুসলমানদের জন্য
রমজান মাসের পুণ্য শেষে ঈদ উদযাপনের পরেও শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখা চেস্টা করা উচিৎ।এভাবেই তারা নফল ইবাদতের মাধ্যমে
আল্লাহর সাণিধ্য অর্জনের সুযোগ পাবেন। শাওয়াল মাসের আমলগুলো আত্মিক ও নৈতিক
উন্নতির পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শাওয়াল মাসের ৬ দিনের সওয়াব ৬দিনে ১০গুন অর্থাৎ ৬০ দিন (বা ২ মাস)।
জিলকদ ঃ
জিলকদ মাস হিজরী বর্ষপঞ্জীর একাদশ মাস যা ইসলামের অত্যন্ত সম্মানিত চারটি হারাম
মাসের মধ্য একটি। এই মাসের জন্য আল্লাহ তা' আলার পক্ষ থেকে বিশেষ কিছু
নির্দেশনাবলী রয়েছে, এবং এর গুরুত্ব কোরআন হাদিসে সুস্পস্ট ভাবে বিবৃত হয়েছে।
হারাম মাসগুলোতে গুনাহের এর শাস্তি কঠিন হয়, তাই এই মাসে বিশেষভাবে গুনাহ থেকে
বিরত থাকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। জিলকদ একটি পবিত্র মাস হওয়ায় এই মাসে বেশি বেশি
নফল ইবাদত করা, যেমন আইয়ামের রোজা (১৩,১৪,১৫ তারিখের রোজা), সোমবার ও
বৃহস্পতিবারের রোজা। কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, এবং নফল নামাজ আদায় করা
উচিৎ।
আরবি মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৬ এ হারাম মাসগুলোর মধ্য জিলকদ উল্লেখ আছে। এটি
সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন ঃ "নিশ্চয় আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার
দিন থেকে আল্লাহর নির্দেশে মাসের সংখ্যা বারো। জিলকদ মাসের প্রকৃত আরবি নাম হলো
'জুলকাআদাহ'। ফারসিতে 'জিলকাআদা'; উর্দুতে 'জিলকাআদ'; বাংলায় 'জিলকদ' রূপ ধারণ
করেছে। এর মধ্য চারটি মাস সম্মানিত। এই চার মাস হলো জিলকদ। জিলহজ্জ,মহররম ও
রজব। এ মাসে যুদ্ধ ও সংঘাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এবং গুনাহ থেকে বাচার জন্য অধিক
সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জিলকদ মাস হলো হজের মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। যারা হজ্জ পালনের পরিকল্পনা
করেছেন, তারা সাধারণত এই মাস থেকেই তাদের সফরের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।
হারাম মাসগুলোতে ইবাদতের পুরুস্কার ওনেক বৃদ্ধি পায়। তবে এই এক মাসে বেশি বেশি
নামাজ পড়া, কোরআন তেলওয়াত করা, ও দোয়া করা বিশেষ ভাবে সুপারিশ করা হয়। এ মাসে
যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিলো, যাতে মানুষ নিরাপদে ইবাদত ও হজ পালন করতে পারে।
জিলহজ ঃ
জিলহজ মাস হলো হিজরী বর্ষপঞ্জীর বারোতম মাস এবং ইসলামের জন্য এটি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও
সম্মানিত মাস। এই সময় মুসলমানদের জন্য অনেক মূল্যবান ইবাদত এবং সওয়াব অর্জনের
সুযোগ মেলে। বিশেষ করে এই মাসে হজ্জ, কোরবানি ও আশুরার মত গুরুত্বপূর্ণ
দিবসগুলো পালন করা হয়।আরবি মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৬ সালে চারটি হারাম মাসের মধ্য একটি হলো জিলহজ।
আল্লাহ ত'আলা কোরআনে বলেছেনঃ "অবশ্যই আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার দিন থেকেই
আল্লাহর বিধানে মাসের সংখ্যা বারো।
এর মধ্য চারটি মাস অত্যন্ত সম্মানিত (হারাম মাস)।"জিলহজ মাসে হজ্জ
পালন করা আবশ্যিক করা হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী যারা সামর্থবান, তাদের
জন্য হজ্জ পালন ইসলামে একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ। এ মাসকে কোরবানির মাসও বলা হয়।
জিলহজ মাসে কোরবানির রীতি পালন করা হয়, যা মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং
হযরত ইব্রাহিম (আ.) কোরবানির স্মৃতি অম্লান রেখে।
পতিক্রিয়া ও ধর্মীয় কর্মকান্ড
২০২৬ সালে মুসলিম উম্মাহ অনেক ধরনের ধর্মীয় কর্মসূচি পালন করবে, যেমনঃ রমজান
মাসের সময় প্রতিদিন সকালের প্রথমভাগে সেহেরি গ্রহন করে সূর্যাস্তের সময়
ইফতার পালন করা হবে। রমজান মাসের রাতগুলোতে ঐতিহ্যবাহী নামায "তারাবীহ" আদায়
করা। শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে, যা রমজান মাসের শেষে আসে।
জুলহিজ্জা মাসে হজ পালনে নির্ধারিত সময়ের মধ্য মুসলমানরা মক্কা গমন করবে এবং
কাবা শরীফের তাওয়াফ করবে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
আরবি ক্যালেন্ডার মুসলিম গোষ্টিতে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। মাসগুলির
সাথে সম্পর্কিত ধর্মীয় দিবসগুলি যেমন ঈদ, আশুরা, এবং রমজান মুসলিম সংস্কৃতির
বিশেষ অংশ। এসব দিবসগুলোতে মুসলমানরা একত্রিত হয় এবং পারিবারিক ও সামাজিক
সম্পর্ক আরো মজবুত করে। ফলে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্য নেক আমলের একটি পন্থা তৈরি হয়।
আর্থিক ও ব্যবসায়ী কর্মকান্ড
হিজরী সালের মাষগুলোতে ব্যবসায়ী কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখে। রজানের সময়
ব্যবসাদাররা বিশেষ অফার এবং ডিসকাউন্ট প্রদান করে। ঈদের সময় মার্কেটে
ভিন্ন ভিন্ন পন্য নিয়ে আসে, এবং সাপ্তাহিক মার্কেটে বিশেষ বাজার বসে। ফলে আর্থিক লেনদেন করে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ে আনন্দিত হন এবং রিজিক এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার
আরবি মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৬ এর প্রতিটি মাস মুসলমানদের জন্য
শিক্ষা,ইবাদত,আত্মশুদ্ধির এক উজ্জ্বল সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হয়। অতএব ২০২৬ সালের
আরবি মাসগুলোতে আমদের উচিৎ মর্জাদা রক্ষা করা, গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং নেক
আমলের দিকে মনোনিবেশ করা। ইসলামি ক্যালেন্ডার শুধু মুসলিম জীবনে একটি
অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু সময় নির্ধারণের মাধ্যম নয় বরং মুসলমানদের অধ্যাত্নিক,
সামাজিক, এবং ধর্মীয় জীবনের মূল ভিত্তি। এই প্রক্রিয়ায় মুসলমানরা আল্লহর নৈকট্য
অর্জন করতে পারে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার পথে এগিয়ে যেতে পারে।
আশা করি, ২০২৬ সালের আরবি মাসের ক্যালেন্ডার সম্পর্কে এই উপস্থাপনা আপনাদের
জন্য উপকারী ও তথ্যপূর্ণ হয়েছে। মুসলিম সমাজের জন্য এই বর্ষটি ইতিবাচক পরিবর্তন
এবং সম্পর্ক দৃঢ়ীকরণের বার্তা নিয়ে আসুক।
লেখকের মন্তব্য ঃ
আরবি মাসের ক্যালেন্ডার মুসলিম সমাজে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে
বিবেচিত। প্রতিটি মাসের সাথে সম্পর্ক রয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় তাৎপর্য ইতিহাস ও শিক্ষণীয় বিষয়। ২০২৬ সালের আরবি ক্যলান্ডার তৈরির মূল লক্ষ হলো পাঠকের সঠিক সময়ে ধর্মীয় কার্যক্রম যেমন, ইবাদত নামাজ, রোজা, হজ্জ এবং অন্যান্য আচার আচরণ পালনে সহায়তা করা। বর্তমান সময়ে আমারা সাধারণত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকলেও মুসলিম জীবনের জন্য হিজরি ক্যালেন্ডার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রমজান, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, হজ্জ, এবং আশুরার মত বিভিন্ন ইবাদতের সময় নির্ধারণ করা হয় আরবি মাসের উপর ভিত্তি করে। এই ক্যালেন্ডারটি তৈরিতে লক্ষ রাখা হয়েছে প্রতিটি মাসের নাম ধারাবাহিকতা ও গুরুত্ব তুলে ধরতে। এর মাধ্যমে পাঠকরা সহজেই জানতে পারবে প্রতিটি মাস কখুন শুরু হচ্ছে এবং এর বিশেষত্ব কী।
অবশেষে বলা যায়, আরবি ক্যালেন্ডার ২০২৬ শুধুমাত্র সময়ের সূচক নয়; বরং এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, ইবাদতের পথপ্রদর্শক এবং আল্লাহর নির্ধারিত সময়চক্রের একটি স্মারক।
ইনফোনেস্টইনের শর্তাবলী মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট পর্যাবেক্ষন করা হয়।
comment url