কাঁঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আজকের এই বিস্তারিত নিবন্ধে আমরা গভীরভাবে আলোকপাত করব। বাংলাদেশ এবং ভারতের গ্রামের এলাকার মধ্যে কাঁঠালি কলা একটি খুবই জনপ্রিয় ফল। এর ক্ষুদ্র আকার, মিষ্টি স্বাদ এবং সহজে পাওয়া যাওয়ার কারণে এটি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।
এই নিবন্ধে আমরা কাঁঠালি কলার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা, খাওয়ার পদ্ধতি ও বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যদি আপনি আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হন, তাহলে এই তথ্যগুলো আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। চলুন শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্র ঃকাঁঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- কাঁঠালি কলা কি এবং এর ইতিহাস
- কাঁঠালি কলার পুষ্টিগুণ বিস্তারিত
- কাঁঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা বিস্তারিত আলোচনা
- কাঁঠালি কলা খাওয়ার অপকারিতা সতর্কতা জরুরী
- কাঁঠালি কলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও টিপস
- কাঁঠালি কলার স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু রেসিপি
- কাঁঠালি কলা কারা খাবেন কারা এড়াবেন
- সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে কাঁঠালি কলা
- কাঁঠালি কলা খাওয়ার সাধারণ প্রশ্ন
- লেখকের মতামত
কাঁঠালি কলা কি এবং এর ইতিহাস
কাঁঠালি কলা, যা বাংলায় কাঁঠালের কলা নামেই পরিচিত মূলত দক্ষিণেশ্বর একটি
স্বদেশী ফল। এটি মুসা প্রজাতির কাছ থেকে জন্মায় এবং এর ফলগুলো কাঁঠালের মতো বড়
গুচ্ছাকারেআকারে এসে থাকে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি বাংলাদেশ,
পশ্চিমবঙ্গ এবং উড়িষ্যার গ্রামীণ অঞ্চলে শতাব্দী ধরে চাষ হয়। প্রাচীন আয়ুর্বেদ
গ্রন্থে এই ফলটিকে 'ক্ষেদ' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা শরীরের তিনটি দোষ (বাত,
পিত্ত, কফ) নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এই কাঁঠালি কলা বিশেষ করে বাত রোগ এবং হজমের
সমস্যার মোকাবেলায় উপকারী বলে মনে করা হয়।
আধুনিক যুগে বিজ্ঞানীরা কাঁঠালি কলার পুষ্টিগুণ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। USDA
- এর তথ্য অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম কাঁঠালি কলাতে রয়েছে প্রায় ৮৯ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি, ৩৫৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম এবং ২.৬ গ্রাম ফাইবার। এটি কম ক্যালরির
(প্রায় ৯০ কিলোক্যালরি) পাশাপাশি উচ্চ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত, ফলে এটি শক্তির
একটি চমৎকার উৎস হিসেবে কাজ করে। তবে, এর অতিরিক্ত প্রাকৃতিক চিনি (ফরুকটোজ) কিছু
মানুষের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
কাঁঠালি কলার পুষ্টিগুণ বিস্তারিত
কাঁঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং অসুবিধা বুঝতে হলে প্রথমে এর পুষ্টি গুনাগুন
সম্পর্কে জানা দরকার। নিচে একটি টেবিলে ১০০ গ্রাম কাঁঠালি কলার পুষ্টির উপাদান
উল্লেখ করা হলোঃ
এই পুষ্টিগুলো থেকে বোঝা যায় যে কাঁঠালি কলা ভিটামিন সি এবং পটাশিয়ামের দৈনিক চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করতে সক্ষম। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিক যৌগগুলি শরীরকে ফ্রি যার্ডিকেল এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। তবে, এর উচ্চ শ্রেণীর পরিমাণের কারনে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
| পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম) | % দৈনিক প্রয়োজন (RDA) |
|---|---|---|
| ক্যালরি | ৯০ কিলোক্যালরি | ৪.৫% |
| কার্বোহাইড্রেট | ২৩ গ্রাম | - |
| চিনি | ১২ গ্রাম | - |
| প্রোটিন | ১.১ গ্রাম | ২.২% |
| ফ্যাট | ০.৩ গ্রাম | ০.৪% |
| ফাইবার | ২.৬ গ্রাম | ১০% |
| ভিটামিন সি | ৮৯ মিলিগ্রাম | ১১১% |
| পটাশিয়াম | ৩৫৮ মিলিগ্রাম | ১০% |
| ভিটামিন বি ৬ | ০.৪ মিলিগ্রাম | ২০% |
| ম্যাগনেসিয়াম | ২৭ মিলিগ্রাম | ৭% |
| আয়রন | ০.২৬ মিলিগ্রাম | ১.৪% |
এই পুষ্টিগুলো থেকে বোঝা যায় যে কাঁঠালি কলা ভিটামিন সি এবং পটাশিয়ামের দৈনিক চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করতে সক্ষম। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিক যৌগগুলি শরীরকে ফ্রি যার্ডিকেল এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। তবে, এর উচ্চ শ্রেণীর পরিমাণের কারনে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
কাঁঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা বিস্তারিত আলোচনা
- হার্ট স্বাস্থ্য ভালো রাখে - হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করার জন্য কাঁঠালি করার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই ফলটিতে থাকা প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৪ হাজার ৭০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম গ্রহণ করলে হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি ২০% পর্যন্ত কমানো যেতে পারে। পাঠালি কলা এই পটাশিয়ামের একটি আদর্শ উৎস। এছাড়াও, এতে উপস্থিত ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ধমনী গুলো পরিষ্কার রাখে। নিয়মিতভাবে এই ফলটি খেলে হার্ট অ্যাটাকের ছুটি হ্রাস পায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণা উল্লেখ করা হয়েছে যে কলা খাওয়া লোকেদের মধ্যে স্ট্রোকের ঘটনা সংখ্যা কম।
- হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে - হজম শক্তি বৃদ্ধি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কাঠালী কলা অত্যন্ত কার্যকর। এতে থাকা ফাইবার পাচতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং সক্রিয় করে। বিশেষভাবে পেকটিন নামক এই ফাইবারটি পাকস্থলীর এসিডিটি কমাতে এবং শরীরের ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়ক। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন, তাদের জন্য প্রতিদিন ১ - ২ টি কাঁঠালি কলা খাওয়া অত্যন্ত সুফলদায়ক। সেই সাথে, এটি ডায়রিয়া প্রতিরোধেও কার্যকর, কারণ এটি অতিরিক্ত পানিকে শোষণ করে রাখে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এই ফলটিকে 'হজমের ঔষধ' হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- শক্তি সরবরাহ এবং ওজন কমানো - পাঠালি কলা গ্লুকোজ, ফরুকটোজ এবং সুক্রোজ এর উপস্থিতির কারণে তাৎক্ষণিক শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। অ্যাথলিট এবং শ্রমিকা এটিকে শরীরের শক্তি ফিরে আনেন। এর কম ক্যালরির পরিমাণ এবং উচ্চ ফাইবার বিষয়বস্তু একে ওজন কমানোর জন্য একটি উপযুক্ত খাদ্য হিসেবে গড়ে তুলেছে। একটি সাধারণ মাঝারি কাঁঠালি কলায় মাত্র ৯০ ক্যালরি থাকে, যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কলা খাওয়ার মাধ্যমে অনেক ব্যক্তি দীর্ঘ মিয়াদি ভাবে ওজন কমাতে সক্ষম হয়েছেন।
-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে - ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
সমৃদ্ধ কাঠালী কলা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি কোল্ড, ফ্লু,
এবং বিভিন্ন ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা দেয়। COVID - 19 মহামারীর সময় কলার
উপকারিতা নিয়ে অনেক গবেষণা করা হয়েছে। তাছাড়া, এর মধ্যে থাকা ভিটামিন বি ৬
আমাদের স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে
উন্নত করে।
-
হাড়ের এবং কিডনির স্বাস্থ্য - পটাশিয়াম কি ডিল ফিল্টারিং প্রক্রিয়ার
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং পাথরের সৃষ্টি সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
অন্যদিকে, ম্যাগনেসিয়াম আমাদের হারকে দৃঢ় করে তোলে। বিভিন্ন গবেষণা দেখা
গেছে যে, নিয়মিত কলা খাওয়া মানুষের কিডনি কার্যক্রমকে উন্নত করে। তবে কলা
যদি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়, তাহলে এটি সমস্যা সৃষ্টি
করতে পারে, যা আমরা পরে আলোচনা করব।
-
ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে - ভিটামিন সি কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি
করে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ বার্ধক্যকে রোধ
করতে সহায়তা করে। চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এটি একটি মাস্ক হিসেবে
ব্যবহার করা সম্ভব। ঐতিহ্যবাহীভাবে, কাঁঠালি কলার খোসা চুলের বিভিন্ন
সমস্যার সমাধানে কার্যকর।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপকারিতা - ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কাঁঠালি কলা একটি বিশেষ দারুন ফল। এর লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI 51) কারণে রক্ত শর্করা ধীরে ধীরে বাড়ে। তবে, এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে পরিমিত বজায় রাখা জরুরী। কাঁঠালি কলা অ্যানিমিয়া থেকে রক্ষায় সাহায্য করে যেহেতু এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আয়রন রয়েছে, এবং মাসিকের সমস্যার সমাধানেও এটি কার্যকরী হতে পারে। এছাড়াও, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি ফলিক এসিডের উৎস হিসেবে কাজ করে, যা তাদের এবং সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এজন্য কাঁঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা জরুরী
কাঁঠালি কলা খাওয়ার অপকারিতা সতর্কতা জরুরী
- রক্তশর্করার এবং ডায়াবেটিস জনিত সমস্যা - কাঁঠালি গলায় প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি (প্রতি ১০০ গ্রামে ১২ গ্রাম), যার ডাইবেটিস আপনাদের রক্তে শর্করার স্তর দ্রুত পাড়ি দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, ডায়াবেটিক রোগীদের দৈনিক একটি বেশি কাঁঠালি কলা খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া, হাইপোগ্লাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের ও বিশেষতকতা অবলম্বন করা উচিত।
- পাচনতন্ত্রের সমস্যার কারণ - বেশি পরিমাণে ফাইবার ব্যবহারে গ্যাস, পেটে ফোলা বা ডায়রিয়া হতে পারে। এটি বিশেষ করে IBS (আন্ত্রিক অস্বস্তি সিনড্রোম) রোগীদের জন্য একটি ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। অপেক্ষাকৃত অপরিপক্ক কলা খাওয়া পেটের ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে।
-
এলার্জিজনিত ও ত্বকের সমস্যা - বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে লেটেক্স
এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা সাধারণত আলার্মিং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি
করে, যেমন ত্বকে ফুসকুড়ি বা শ্বাসকষ্ট। এছাড়া, অতিরিক্ত পটাশিয়ামের গ্রহ
নেই হাইপারক্যামেলিয়া হতে পারে, যা বিশেষ করে কিডনি রোগীদের জন্য অত্যন্ত
বিপদজনক।
-
ওজন বাড়ার সম্ভাবনা - যদিও কম ক্যালোরি খাবার, এবং অতিরিক্ত গ্রহণের
ফলে শরীরে চিনি জমা হতে পারে এবং ফলস্বরূপ ওজন বাড়ায়। শিশুদের ক্ষেত্রে,
অতিরিক্ত খাবার খাওয়া দাঁতের ক্ষয় সৃষ্টি হতে পারে।
-
অন্যান্য অপকারিতা - কিডনি পাথরে রোগীদের জন্য পটাশিয়াম একটি উদ্বেগের
কারণ। এটি বিটা - ব্লকারের মত কিছু ওষুধের সঙ্গে পারস্পরিক ক্রিয়া করতে
পারে। এছাড়া, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পটাশিয়াম গ্রহণ করলে এসিডিটির সমস্যা
সৃষ্টি হতে পারে।
কাঁঠালি কলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও টিপস
- পরিমাণ ঃ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ১ - ২টি, এবং শিশুদের জন্য ১ টি যথেষ্ট
- সময় ঃ সকালের সময় খালি পেটে অথবা ব্যায়ামের পরে খেতে পারেন।
- রান্না ঃ পাকা অবস্থায় খাওয়া শ্রেয়, কাঁচা থাকলে হজম করা কঠিন হতে পারে।
- সংরক্ষণ ঃ ঠান্ডা স্থানে রাখুন, তবে ফ্রিজে না রাখতে চেষ্টা করুন।
- রেসিপি ঃ স্মুদি, সালাদ, বা বেকড বিষে ব্যবহার করার জন্য আদর্শ। উদাহরণস্বরূপ, কাঁঠালি কলার মিল্কশেক বানানো যেতে পারে - ২টি কলা, দুধ এবং মধু নিয়ে ব্লেন্ড করুন।
কাঁঠালি কলার স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু রেসিপি
কাঁঠালি কলা কেবল একটি পুষ্টিকর ফলই নয়, বরং এটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর
বিভিন্ন রেসিপি জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এর মিষ্টি স্বাদ, ক্রিমি গঠন এবং
পুষ্টিগুণ এটিকে স্মুদি, ডেজার্ট, স্ন্যাকস এবং এমনকি ত্বককে যত্ন নিতে
ব্যবহারযোগ্য গড়ে তুলে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক কাঁঠালি করার স্বাস্থ্যকর ও
সুস্বাদু রেসিপি।
কাঁঠালি কলার মিল্কশেকঃ শক্তি ও পুষ্টির উৎস
কাঁঠালি কলা মিল্কশেখ হলো একটি স্বাস্থ্যকর ও দ্রুত প্রস্তুত করার উপযোগী পানীয়,
যা সকালের স্ন্যাক বা ব্যায়ামের পর তাজা হওয়ার জন্য চমৎকার। এই মিল্কশেকে
প্রোটিন, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি আছে, যা শরীরের শক্তি বাড়তে সহায়তা
করে।
উপকরণঃ
- ২ টি পাকা কাঁঠালি কলা
- ১ কাপ দুধ (নন -ডেয়ারি অথবা গরুর দুধ)
- ১ টেবিল চামচ মধু বা চিনি (ইচ্ছা অনুসারে)
- ১/৪ চা চামচ এলাচ গুঁড়ো
- ৪-৫ টি বরফের টুকরা
- এটি একটি সহজ এবং সুস্বাদু উপায় যা আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে পুষ্টিযোগ করা দারুন উপায়।
প্রস্তুতি পদ্ধতিঃ
- প্রথমে কাঁঠালি কলার খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে ছোট টুকরো করে কেটে নিন।
- এরপর একটি ব্লেন্ডারে কলা, দুধ এবং এলাচ গুড়ো একসাথে দিয়ে মসৃণ করে নিন।
- এরপর বরফের টুকরো দিন এবং পুনরায় ব্লেন্ড করুন।
- সবকিছু ভালো মতন মিশে গেলে প্রস্তুত মিশ্রণটি একটি গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করুন ঠান্ডা অবস্থায়।
পুষ্টিগুণঃ এই মিল্কশেকের প্রায় ২০০ ক্যালোরি, ৫ গ্রাম প্রোটিন এবং ৩৫০
মিলিগ্রাম পটাশিয়াম বিদ্যমান। এটি ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে এবং পেশির জন্য
খুব উপকারী।
কাঁঠালি কলার স্মুদি ঃ ওজন কমানোর জন্য কার্যকর
কাঁঠালি কলার স্মুদি একটি দারুন উপায় । আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং হজমশক্তি
বাড়াতে সাহায্য করে। এই স্মুদিতে উচ্চ মাত্রার ফাইবার এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট
রয়েছে, যা আপনাকে দীর্ঘ সময় পূর্ণ রাখে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।.
উপকরণ ঃ
- ১টি পাকা কাঁঠালি কলা
- ১/২ কাপ দই (গ্রিক বা সাধারণ)
- ১/২ কাপ স্ট্রবেরি অথবা বুলবেরি
- ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড
- ১ কাপ পানি বা নারকেল পানি
এই স্বাস্থ্যকর স্মুদি প্রস্তুত করতে, উপকরণ গুলি ব্লেন্ডারে একসঙ্গে
মিশিয়ে নিন এবং স্মুদির ইনজয় করুন।
প্রস্তুত প্রণালী ঃ
- প্রথমে কলার খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিন।
- তারপর একটি ব্লেন্ডারে কলা, দই, বেরি, চিয়া সিড এবং কিছু পানি একসাথে ঢেলে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন।
- যখন মিশ্রণটি মসৃণ হয়ে যাবে, তখন এটি একটি ক্লাসে ঢালুন এবং উপরে চিয়া সিড ছিটিয়ে দিন।
- এটি ঠান্ডা অবস্থায় পরিবেশন করুন।
পুষ্টিগুণ ঃ এই স্মুদিতে প্রায় ১৫০ - ১৮০ ক্যালরি, ৩ গ্রাম ফাইবার এবং
প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এটি ওজন কমানোর ডায়েটের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
বেকড কাঁঠালি কলা ঃ ডায়াবেটিস বান্ধব ডেজার্ট
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেকড কাঁঠালি কলা একটি স্বাস্থ্যকর ও কম চিনির
ডেজার্ট। এটি সুমিষ্ট হওয়ার পরেও রক্তের শর্করার মাত্রার অল্প প্রভাব ফেলে।
উপকরণ ঃ
২টি পাকা কাঠালী কলা
১ চা চামচ দারুচিনি গুড়
১ টেবিল চামচ বাদাম গুঁড়ো
১ চা চামচ লেবুর রস
প্রস্তুত প্রণালী ঃ
- প্রথমে ওভেনকে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রি - হিট করুন।
- তারপর, কলা গুলোকে খোসা সহ অর্ধেক করে কেটে বেকিং ট্রেতে রেখে দিন।
- এখন, এর উপর দারুচিনি গুঁড়ো, লেবুর রস এবং বাদাম গুঁড়ো ছিটিয়ে দিন।
- ১৫ - ২০ মিনিটের জন্য বেক করুন, যতক্ষণ না কলাগুলো নরম হয়ে যায়।
- পরিশেষে, কুশা সরিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
কাঁঠালি কলার সালাদ ঃ ভিটামিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ
এই সালাদটি স্বাস্থ্যকর এবং সতেজ, যা দুপুরের খাবারের অংশ হিসেবে উপযুক্ত। এটি
প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন সি ধারণ করে।
উপকরণ ঃ
- ১ টি পাকা কাঁঠাল কলা
- ১/২ কাপ শসা (কিউব আকারে কাটা)
- ১/৪ কাপ টমেটো (কিউব আকারে কাটা)
- ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
- ১ চা চামচ লেবুর রস
- লবণ ও গোলমরিচ (স্বাদ ও পছন্দমত)
প্রস্তুত প্রণালী ঃ
- প্রথমে কলার খোসা ছাড়িয়ে নিন এবং পাতলা টুকরো করে কেটে ফেলুন।
- তারপর একটি বাটিতে কলা, শসা এবং টমেটো একসাথে মিশিয়ে নিন।
- এরপর উপর থেকে অলিভ অয়েল, লেবুর রস, লবণ এবং গোলমরিচ ছিটিয়ে দিন।
- সবগুলো উপাদানকে ভালো করে মিশিয়ে করে পরিবেশন করুন।
কাঁঠালি কলা পায়েস ঃ ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন
কাঁঠালি কলার পায়েস হলো বাংলার একটি ঐতিহ্যমন্ডিত মিষ্টান্ন, যেটি বিশেষ
করে উৎসব বা বিশেষ উপলক্ষে তৈরি করা হয়।
উপকরণ ঃ
- ২ টি পাকা কাঁঠালি কলা
- ১ লিটার দুধ
- ১/২ কাপ চিনি
- ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ো
- ১/৪ চা চামচ এলাচা গুঁড়ো
- ১ টেবিল চামচ কিশমিস এবং কাজু
প্রস্তুত প্রণালী ঃ
- প্রথমে কলা গুলি ভালো করে ম্যাশ করুন।
- একটি প্যানে দুধ গরম করুন এবং তাতে চিনি ও চালের গুঁড়ো মিশ্রণ করুন
- যখন মিশ্রণটা ঘন হয়ে আসবে, তখন তাতে ম্যাশ করা কলা এবং এলাচের গুরুর যোগ করুন।
- শেষে কিসমিস ও কাজু দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
পুষ্টিগুণ ঃ এই পায়েসে প্রায় ২৫০ ক্যালোরি এবং ক্যালসিয়াম অন্তর্ভুক্ত
রয়েছে, তাই এটিকে সীমিত পরিসরে গ্রহণ করা উচিত।
আরো পড়ুন ঃ শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
কাঁঠালি কলা ফেস মাস্ক ঃ ত্বকের জন্য DIY রেসিপি
কাঁঠালি কলা শুধু পুষ্টিকর খাবারই নয়, এটি ত্বকের যত্নে অত্যন্ত কার্যকরী একটি
উপাদানও। এই ফেস মাস্কটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
উপকরণগুলো নিম্নরূপ ঃ
- ১ টি পাখা কাঁঠালি কলা
- ১ টেবিল চামচ মধু
- ১ টেবিল চামচ দই
প্রস্তুত প্রণালী ঃ
- প্রথমে এক কাপ কলা মিশ্রিত করুন এবং সেটিকে মধু ও দইয়ের সাথে ভালভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- এরপর এই পেস্টটি আপনার মুখে ১৫ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন।
- এই সময়ের পর, হালকা উষ্ণ পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
পুষ্টিগুণ ঃ এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
গুলি ত্বকের পার্থক্য প্রতিরোধ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কাঁঠালি কলা কারা খাবেন কারা এড়াবেন
কাঁঠালি কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,
পাশাপাশি এটি কাদের জন্য উপযুক্ত এবং কাদের তা এড়িয়ে চলা উচিত, সেই
বিষয়টিও জানা দরকার। কাঁঠালি কলা একটি পুষ্টিকর ফল, যা পটাশিয়াম,
ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এটি হজমে সহায়ক, শক্তি
প্রদান করে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে, কিছু নির্দিষ্ট
স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে কাঁঠালি কলা সতর্কতার সাথে গ্রহণ করা উচিত বা তা এড়ানো
উচিত। এই প্রবন্ধে, আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কাঁঠালি কলা কোন ব্যক্তি খেতে
পারেন এবং কে এড়ানো উচিত, যাতে আপনি তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে
সক্ষম হন।
কাঁঠালি কলাতে উপস্থিত গ্লুকোজ এবং সুক্রোজ দ্রুত শক্তি যোগান দেয়,, যা
অ্যাথলিটদের, বিডি - গিমে অনুশীলন করা ব্যক্তিদের এবং শারীরিক পরিশ্রমে যুক্ত
মানুষের জন্য খুবই উপকারী। এতে অন্তর্ভুক্ত পটাশিয়াম পেশির সংকোচন নিরোধক হিসেবে
কাজ করে। একটি মাঝারি আকারের কাঁঠালি কলায় প্রায় ৩৫৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
থাকে, যা ব্যায়ামের পর পেশির সতেজতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
কাঁঠালি কলায় ফলিক এসিড এবং আয়রনের উপস্থিতি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে
উপকারী। ফলিক এসিড ভ্রুণের মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। এর সাথে, এটি ক্লান্তি হ্রাস করতে সহায়তা করে এবং দুধ পান
করানো মায়েদের জন্য শক্তি যোগায়। প্রতিদিন এক থেকে দুটি কাঁঠালি কলা তাদের
পুষ্টির প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। শিশু ও কিশোরদের বৃদ্ধি এবং মানসিক উন্নয়নের
জন্য কাঁঠালি কলা একটি অত্যন্ত উপকারী ফল। এতে থাকা ভিটামিন বি ৬ মস্তিষ্কের
কার্যক্রম উন্নত করে, এবং ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হার গুলিকে শক্তিশালী করে।
শিশুদের জন্য কাঁঠালি কলা স্মুদি বা চটকানো হিসেবে পরিবেশন করা যেতে পারে।
কাঠালি কলা প্রায় ২.৬ গ্রাম ফাইবার প্রদান করে প্রতি ১০০ গ্রামে, যা
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং আচম প্রক্রিয়ার স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক। এর
মধ্যে রয়েছে একটি নামক বিশেষ ফাইবার, যা এসিডিটি নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে এবং
ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির উৎস হিসেবে কাজ করে। যারা ক্রনিক কোষ্ঠকাঠিন্য বা
হজমজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের প্রতিদিন একটি কাঁঠালি কলা খাওয়ার পরামর্শ
দেওয়া হয়। এজন্য " কাঁঠালি কলা হজমের জন্য" খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে।
পটাশিয়াম এবং ফাইবার আমাদের হৃদরোগের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। কাঁঠালি কলার মতো ফল গুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং
কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে,
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম গ্রহণ করলে হৃৎপিণ্ডের মারাত্মক আক্রমণের
ঝুঁকি ২০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তবে, অতিরিক্ত পটাশিয়াম গ্রহণ থেকে বিরত থাকা
উচিত।
কাঁঠালি কলা খাওয়া কিছু বিশেষ ধরনের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে
পারে। এখানে তা তুলে ধরা হলো ঃ
কাঁঠালি কলার মধ্যে প্রাকৃতিক চিনি বিদ্যমান (১২ গ্রাম প্রতি ১০০ গ্রামে), যা
রক্তে শর্করার স্তর দ্রুত বাড়াতে সক্ষম। টাইপ - ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে তারা প্রতিদিন একটি কাঁঠালি কলার বেশি খাওয়া উচিত নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সুপারিশ অনুসারে, ডায়াবেটিকদের জন্য কম
গ্লাইসেমিক ফল বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া এটি খাদ্য থেকে
বাদ দেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত পটাশিয়াম কিডনি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, যেহেতু
তাদের কিডনি পটাশিয়াম সঠিকভাবে ফিল্টার করতে পারে না। হাইপারক্যালেমিয়া, অর্থাৎ
পটাশিয়ামের অতিরিক্ত স্তর, হৃদয়ের ছন্দের সংক্রান্ত সমস্যা গুলি তৈরি করতে
পারে। যাদের ডায়ালিসিস প্রয়োজন, তাদের কাঁঠালি কলা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাই
উচিত।
কিছু মানুষের জন্য কাঁঠালি কলা ল্যাটেক্স - ফ্রুট সিন্ড্রোমের কারণে এলার্জি
সৃষ্টি করতে পারে। এই অবস্থায় সাধারণ লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে তোকে ফুসকুড়ি,
মুখে চুলকানি এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা। যাদের অ্যালার্জি এর ঝুঁকি বেশি, তাদের
জন্য প্রথমে সামান্য পরিমাণে খেয়ে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। ইরিটেবল বাওয়েল (IBS)
বা সংবেদনশীল পাচনতন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত
কাঠালী কলা গ্যাস, ফোলা ভাব বা ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যা নিয়ে থাকা
মানুষজন সাধারণত অল্প পরিমাণে খাওয়ার দিকে যায়, তবে তাদের উচিত পাকা কলা
নির্বাচিত করা।
যারা বিটা - ব্লকার চিকিৎসা নিচ্ছেন, বিশেষ করে হৃদরোগের জন্য, তাদের
কাঁঠালি কলার পরিমাণ সঠিকভাবে সীমিত করা উচিত। কারণ অতিরিক্ত পটাশিয়াম এই
ওষুধগুলোর কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা
উচিত
সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে কাঁঠালি কলা
কাঁঠালি কলা খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা ও কিছু অবাঞ্ছিত অধিক রয়েছে, তবে এটি
সুষম খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ও লক্ষ্য করা হয়। এটি ছোট, মিষ্টি
এবং পুষ্টিকর ফলটি পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ৬, ফাইবার
এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন
পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। সুষম খাদ্যের মূল উদ্দেশ্য হলো শরীরের জন্য অপরিহার্য
কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এবং খনিজ গুলোর সঠিক ভারসাম্য বজায়
রাখা। কাঁঠালি কলা এই ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি
কম ক্যালোরি সহজে হজম করা যায় এবং দৈনিক শক্তির একটি সুসংহত উৎস হিসেবে কাজ
করে।
কাঁঠালি কলায় প্রায় ২৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়, যা মানবদের জন্য
প্রধান জ্বালানি সরবরাহ করে। এটি বিশেষ করে অ্যাথলিট, শ্রমিক এবং শিশুদের জন্য
দ্রুত শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এর লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI ৫১) থাকার কারণে
রক্তের শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, ফলে একটি সুষম শক্তির যোগান দিতে
সহায়তা করে। কাঁঠালি কলার ফাইবার আঁচল তন্ত্র কে সকলি রক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে থাকা পেকটিন নামক ফাইবার
পাকস্থলীর এসিডিটি এবং গট মাইক্রোবায়োমকে শক্তিশালী করে। স্বাস্থ্যকর একটি
খাদ্যে প্রতিদিনে ফাইবারের চাহিদ ২৫ - ৩০ গ্রাম হওয়া উচিত, এবং কাঁঠালি কলা এর
একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে।
কাঁঠালি কলা বিভিন্ন পুষ্টিগণের সমৃদ্ধ, যেমন ভিটামিন সি, বি ৬, পটাশিয়াম
এবং ম্যাগনেসিয়াম। ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে এবং
পটাশিয়াম রক্তচাপে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। আমেরিকান হার্ট
অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, পটাশিয়াম হার্ট এটাকের ঝুঁকি ২০% কমাতে সাহায্য
করে। তাছাড়া, ভিটামিন বি ৬ মানসিক চাপ হ্রাসে সহায়ক এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা
বৃদ্ধি করে। আঠালি কলাই মাত্র ০.৩ গ্রাম ফ্যাট রয়েছে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে খুব
উপকারী। এটি ক্ষুধা কে নিয়ন্ত্রণ করে এবং অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করে। সুষম খাদ্যের
জন্য কম ক্যালরির খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর কাঁঠালি কলা সে চাহিদা পূরণের
জন্য আদর্শ।
আরো পড়ুন ঃ অ্যাকুরিয়ামের মাছের খাবার দেওয়ার নিয়ম
কাঁঠালি কলা খাওয়ার সাধারণ প্রশ্ন
কাঁঠালি কলা খাওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে অনেকেই নানা প্রশ্নের মধ্যে
দ্বন্দ্বে ভোগেন। এই পুষ্টিকর ফলটি মিষ্টি স্বাদের কারণে এবং স্বাস্থ্যকর
উপকারিতার জন্য বেশ জনপ্রিয়। তবে, এটি খাওয়া সঠিক উপায়, সময় এবং পরিমাণ
সম্পর্কে বেশিরভাগ লোকেরই পরিষ্কার ধারণা নেই। এখানে আমরা কাঁঠালি কলা খাওয়ার
সাধারণ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব।
কাঁঠালি কলা কি ওজন বাড়ায় ?
উত্তর ঃ কাঁঠালি কলা ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক হতে পারে, । যদি এটি
পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হয়। ১০০ গ্রাম কাঠালী কলাই প্রতিনিধিত্বমূলকভাবে ৯০
ক্যালোরি এবং ২.৬ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং
দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। তবে, অতিরিক্ত খেলে এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক চিনি
(১২ গ্রাম প্রতি ১০০ গ্রাম) ওজন বাড়াতে পারে। সাধারণত, দৈনিক ১ - ২টি কলা ওজন
কমানোর ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। টিসুসম খাদ্যের সাথে এটি গ্রহণ করলে ওজন
বাড়ানোর ঝুঁকি কমে যায়।
ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে কাঁঠালি কলা খাওয়া স্বাস্থ্যকর হবে কি ?
উত্তর ঃ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কাঁঠালি কলা খেতে পারেন, তবে
কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কাঁঠালি কলায় প্রাকৃতিক চিনি বিদ্যমান, যা
রক্তের শর্করার স্তর দ্রুত পাড়ি দিতে পারে। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI ৫১)
মাঝারি পর্যায় অবস্থিত, তাই দিনে একটি কলা পরিমাণে খেলে তা সাধারণ নিরাপদ
বিবেচনা করা হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য কলার সাথে প্রোটিন ও ফাইবার যুক্ত
খাবার, যেমন দই বা বাদাম, গ্রহণ করা উপকারী হতে পারে। এগুলো সব রক্তের
শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে, সব সময় চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা
উচিত।
কাঁঠালি কলা কতটুকু খাওয়া নিরাপদ ?
উত্তর ঃ সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ১ - ২টি কাঠালি কলা খাও
নিরাপদ। শিশুদের ক্ষেত্রে .১টি এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ১ - ২টি যথেষ্ট। তবে
অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পটাশিয়ামের স্তর বেরিয়ে যাওয়ার ফলে হাইপাক্যালেমিয়া
কিংবা পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস বা কিডনি রোগীদের জন্য পরিমাণ আরো
কম হওয়া উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
কাঁঠালি কলা কি শিশুদের জন্য নিরাপদ ?
উত্তর ঃ কাঁঠালি কলা শিশুদের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিদায়ক। এই ফলে রয়েছে
ভিটামিন বি ৬, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফলিক এসিড, যা মস্তিষ্কের উন্নতি ও হাড়ের
গঠনে সাহায্য করে। এটি শিশুদের জন্য ম্যাশ করে বা স্মুদিতে মিশিয়ে দেওয়া যেতে
পারে। তবে, অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে পেট ফোলা অথবা দাঁতের ক্ষয়ের সমস্যা হতে পারে।
দৈনিক একটি কলা শিশুদের জন্য উপযুক্ত।
কাঁঠালি কলা কি কিডনি রোগীদের জন্য নিরাপদ ?
উত্তর ঃ কিডনি রোগীরা কাঁঠালি কলা খাওয়ার খেতে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
এই ফলটিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি (৩৮৫ মিলিগ্রাম প্রতি ১০০ গ্রাম), যা
কিডনির সমস্যা নিয়ে থাকা রোগীদের জন্য হাইপারক্যালেমিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষ করে, যারা ডায়ালিসিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জন্য কাঁঠালি কলা
পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। অবশ্যই, তা খানিকটা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখকের মতামত
এখন উপকৃতির দিক থেকে শুরু করি। আঠালি করা সত্যিই শক্তিদায়ক একটি ফল। এটি প্রচুর
ভাইভা সমৃদ্ধ, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং পেটকে পরিষ্কার রাখতে
সাহায্য করে। কলার ভিতরে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদ
যন্ত্রের স্বাস্থ্যের সহায় ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া, এতে ভিটামিন বি ৬ এবং
ভিটামিন সি রয়েছে, যা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। সকালে কাঁঠালি কলা খাওয়ার অভ্যাস
হলে সারাদিনে ক্লান্তি কম অনুভূত হয়, এবং আমি নিজেও এই অভ্যাসটা নিয়মিত পালন
করি।
যদিও কাঁঠালি করার অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবে কিছু সর্তকতা অবশ্যম্ভাবী। এর মধ্যে
একটি হলো, কাঁঠালি কলায় শহর করা তুলনামূলক পরিমান বেশি থাকায় ডায়াবেটিস
রোগীদের জন্য এটি পরিমিত পরিমানে ব্যবহার করা উপযোগী। তাছাড়া, অনেক সময়
অতিমাত্রায় কাঁঠালি কলা খেলে গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত
সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে হয়, যা আমি নিজে অনুভব করেছি। অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে
ওজন বৃদ্ধি পাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে, বিশেষত যারা নিজেদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে
চান, তাদের জন্য এটি একটি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
আমার কাছে এ ধারনা আছে, কাঁঠালি কলা একটি পুষ্টিকর ফল - তবে এটি সঠিক
পরিমাণে এবং ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত চাহিদার ভিত্তিতে খাওয়াই উত্তম। প্রতিদিনের
খাদ্য তালিকায় কাঁঠালি কলা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, কিন্তু এর অতিরিক্ত
ব্যবহার খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং, স্বাস্থ্য সচেতনতার গুরুত্ব অপরিসীম;
তাই আমাদের খাদ্য গ্রহণে সঠিক মনোযোগ দেওয়া উচিত। এমন আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল
পেতে আমাদের পেজে নিয়মিত ভিজিট করতে ভুলবেন না। উপরোক্ত আর্টিকেলে ভুল ত্রুটি
ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করে
জানাবেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন ইনফনেস্টইন এর সাথেই থাকুন।




ইনফোনেস্টইনের শর্তাবলী মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট পর্যাবেক্ষন করা হয়।
comment url