আল কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ

 

আল কুরআন নিয়ে আলোচনা করলে ইসলামের ধর্মের মূল শিক্ষা, নৈতিকতা, তাওহীদ, রিসালাত এবং পরকালের দিকনির্দেশনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অনুধাবন করা সম্ভব। এই আর্টিকেলে, কুরআনের মৌলিক আয়াত সমূহ এবং তাদের বিশ্লেষণের মাধ্যমে এসব দিকের  বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

আল-কুরআনের-বিষয়ভিত্তিক-আয়াত-ও-বিশ্লেষণ

এখানে কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ আয়াতগুলো ব্যাখ্যা একত্রিত করা হয়েছে, যা আপনাকে ইসলামের গভীরত্বে প্রবেশ করতে সহায়তা করবে। বিষয় ভিত্তিক আয়াত একত্র করে তাদের প্রেক্ষাপট এবং পারস্পারিক সম্পর্ক এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব।

পোস্ট সূচীপত্র ঃ আল কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ

ভূমিকা আল কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ 

আল - কুরআন হলো মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ ও সারবঙ্গীণ পথে নির্দেশনা সমূহের উৎস। এটি শুধুমাত্র পবিত্র বিধি - বিধানই নয়, বরং জীবনের প্রতিটি দিক, নৈতিকতা, বিশ্বাস এবং সমাজ সংক্রান্ত গভীর শিক্ষার সমাহার। কিন্তু কুরআন যদি আর আই টি আয়াত বা অনুচ্ছেদ হিসেবে করা হয়, তাহলে এর মূল উদ্দেশ্য এবং বিষয়ভিত্তিক বার্তা গুলো অনেক অংশে অদৃশ্য হয়ে যায়। তাই বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ বা টপিক ভিত্তিক তাফসীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়ায় আয়াতগুলোকে একত্রিত করা হয় এবং তাদের প্রেক্ষাপট ও সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়। এই আর্টিকেলে আমরা কুরআনের কিছু মৌলিক বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করব, যেমন ঃ একত্ববাদ বা তাওহীদ, নবুওত, এবং বার্তা বা রিসালাত, পরকাল ও বিচার বা আখিরাত, ইবাদত কোন নৈতিকতা, সামাজিক আইন এবং ন্যায়বিচার। প্রতিটি বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত কিছু নির্দিষ্ট আয়াত উপস্থাপন করে আমরা তা বিশ্লেষণ করবো।

আল কুরআনের বিষয়ভিত্তিক অধ্যায়ন কি

বিষয়ভিত্তিক অধ্যায়ের মধ্যে বোঝানো হয় - কোন নির্দিষ্ট থিম বা বিষয়ে (যেমন ঈমান, নৈতিকতা, জিহাদ, দান সহায়তা ইত্যাদি) সম্পর্কিত সকল আয়াত জড়ো করে সেগুলোর মধ্যে একটি সাধারণ সূত্র বা বার্তা উদঘাটন করা। এভাবেই আমরা ব্যবস্থা করতে পারি যাতে দ্রুত বুঝতে পারি যে কুরআন একটি বিশেষ বিষয় সম্পর্কে কি রকম সম্মানিত বক্তব্য তুলে ধরেছে, শুধুমাত্র বিচ্ছিন্ন আয়াতের দিকে না তাকিয়ে। এই পদ্ধতির উপকারিতা হলো - বিভিন্ন সূরায় বিচ্ছিন্নভাবে থাকা সংশ্লিষ্ট আয়াত গুলো একত্রিত হয়ে যায়, এবং আধুনিক জীবনের প্রেক্ষাপটেও তা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আল কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ এটি উল্লেখযোগ্য।

কেন বিষয়ভিত্তিকভাবে কুরআন অধ্যায়ন জরুরী

বিষয়ভিত্তিক কুরআন শিক্ষার কিছু কারণ উল্লেখযোগ্যঃ
  • সম্পূর্ণ চিত্র প্রাপ্তি - একটি নির্দিষ্ট বিষয়, যেমনঃ নিষ্কাম দান বা পরকালে বিশ্বাস, নিয়ে বিভিন্ন আয়াতের বিদ্যমান। এসব আয়াতকে বিষয়ভিত্তিকভাবে একত্রিত করলে সেই বিষয়টি পুরো চিত্র উঠে আসে।
  • সৌমশাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা - আজকের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে কুরআনের আয়াতগুলোকে একসাথে বিশ্লেষণ করা গেলে সেগুলোকে ভালোভাবে বোধগম্য করে গ্রহণ করা সহজ হয়ে ওঠে।
  • গভীর চিন্তা ও বাস্তবায়ন - বিষয়ভিত্তিক অধ্যয়ন পাঠককে কেবল আয়াত পড়ার সীমিত দিক থেকে বাইরে নিয়ে আসে; এটি চিন্তা - ভাবনা এবং বাস্তবায়নের দিকে মনোনিবেশ করে।
  • গবেষণা ও দাওয়াতের কার্যকরী পদ্ধতি - গবেষণা, শিক্ষা এবং দাওয়াত মূলক কার্যক্রমে বিষয়ভিত্তিকভাবে আয়াত বিশ্লেষণ লাভজনক ও কার্যকরী একটি পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে।
আল কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ বাস্তব জীবনে কতটা জরুরী তা আমরা উপরোক্ত কারণ থেকে জানতে পারলাম। চলুন এবার কুরআনের প্রধান বিষয় সমূহ নিয়ে আলোচনা করা যাক। আল কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে।

আল-কুরআনের-বিষয়ভিত্তিক-আয়াত-ও-বিশ্লেষণ

কুরআনের প্রধান বিষয়সমূহ

নিচে কিছু মূল বিষয় ও তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো, যা আয়াত ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। 

তাওহীদ (একত্ববাদ)

কুরআনের কেন্দ্র বিষয় হলো আল্লাহর একত্ববাদ, যা কেবল একমাত্র উপাস্য হিসাবে গন্য করা হয়। " তাওহিদ" শব্দটি কুরআনের প্রতিটি পৃষ্ঠায় প্রায়শই প্রতিফলিত হয়। উদাহরণস্বরূপ সূরা ইখলাস এর আয়াতে বলা হয়েছে;

" বলঃ তিনি আল্লাহ, একমাত্র; আল্লাহ রইলেন অনন্য। তিনি জন্ম নেননি বা জন্ম দেননি; এবং তার কোন সমকক্ষ নেই।" (সূরা ইখলাস ১ - ৪)। এই আয়াত আমাদের আল্লাহর সত্তা, অনন্যতা এবং অদ্বিতীয়তা সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়। তাওহীদ মানে শুধুমাত্র বিশ্বাস করা নয়, বরং আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজ ও সিদ্ধান্তে আল্লাহর একত্বকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা। এই কথাটির সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য আয়াতও রয়েছে, যা পুরনো কুসংস্কার, শিরক এবং মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কতা প্রদান করে।

তাওহীদ হচ্ছে ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি, এবং এটি ছাড়া ইসলাম সম্পন্ন হতে পারে না। একজন মুসলমানের প্রতিটি কাজ, চিন্তা এবং উদ্দেশ্য তাওহীদের বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। এটি শিরক (অংশীদার স্থাপন) থেকে মুক্ত থাকা এবং সঠিক আকিদা (বিশ্বাস) বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রিসালাত (নবুওত ও বার্তা)

কুরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ মানুষকে দারিদ্র, অজ্ঞতা এবং তত্ত্ব - ভ্রান্তি থেকে মুক্ত করার জন্য রাসূল ও উম্মত প্রেরণ করেছেন। একটি আয়াত (আন - নাহলঃ৩৬) নির্দেশ করে ঃ

"আমি প্রতিটি ও মোদের জন্য একটি রাসুল পাঠিয়েছি - যাতে তারা আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুতকে পরিত্যাগ করে"

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয়েছে নবুওত কেবল ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়; বরং এটি একটি অবিরাম প্রক্রিয়া, যা মানবজাতির জন্য আল্লাহর নির্দেশাবলী প্রদান করে। রিসালাতের লক্ষ্য হচ্ছে নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, যাদের জীবনের শিক্ষণীয় দিক, শক্তিশালী ধৈর্য এবং আজকের প্রাপ্ত শিক্ষা আমাদের জন্য মূল্যবান। রিসালাতেই আস্থা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আল্লাহর স্বভাব এবং তার নীতিমালা সম্পর্কে জানা ও অনুসরণ করার একটি উপায়।

আখিরাত (পরকাল ও জাজিয়া)

কুরআনে বেশকিছু আয়াত রয়েছে যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে এই জীবনের কোন শেষ নেই। পরবর্তী জীবন, পুনরুজ্জীবন এবং বিচার দিবসের বিষয়টি এসব আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে, সূরা আল - ইমরানের একটি আয়াতে বলা হয়েছে;

" প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।" (সূরা আল ইমরান ১৮৫)

এই আয়াতটি আমাদের সচেতন করে যে, আমরা এই পৃথিবীতে শুধু সাধারণ জীবনের মধ্যে থাকি না, বরং একদিন অন্য একটি স্থানে পৌঁছাবো। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নৈতিকতা এবং দায়িত্ব সবকিছুই এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। আখিরাতের ধারণা আমাদের দৈনন্দিন কাজ, চিন্তা ও মূল্যবোধকে পরবর্তী জীবনের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করতে উদ্বুদ্ধ করে। আখিরাতের জীবন হলো কর্মফল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে, যেখানে দুনিয়াকে একটি শস্য ক্ষেত্রের রূপে দেখা হয়, যা পরকালের ফল উৎপন্ন করবে।

ইবাদত ও নৈতিকতা

কুরআন শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক উপাসনা বা আমাদের নিয়মাবলি প্রদান করেনি, বরং এটি নৈতিক আচরণ, মানবিক মূল্যবোধ এবং চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে গভীর গুরুত্বারোপ করেছে।

উদাহরণ হিসেবে, সূরা আল - আনকাবুত (৪৫) এ উল্লেখিত আয়াতে বলা হয়েছেঃ

"নিশ্চয়ই সালাত মানুষদেরকে অশ্লীলতা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে"

এটি নির্দেশ করে যে, ইবাদত (সালাত) শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা নয় - এটি নৈতিক উৎকর্ষতা অর্জনে পাশাপাশি সমাজে শান্তি এবং মুক্তির জন্য জরুরী। এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে, প্রত্যেকটি ইবাদত, যেমন দান সদকা, রোজা এবং হজ, এগুলো কেবল শারীরিক কর্মকাণ্ড নয়; বরং এগুলো মানুষের মন, চরিত্র এবং সমাজের সাথে একটি গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে। অন্যদিকে, নৈতিকতা হচ্ছে উন্নত আচরণ, যা ইবাদতের মাধ্যমে অর্জিত হয় এবং এটি আল্লাহর প্রতি আস্থা ও আনুগত্যের একটি প্রকাশ।

সমাজ ও আইন

কুরআন মানব সমাজ, মানব - বসবাসের সম্পর্ক, অর্থনীতি এবং পারিবারিক প্রশ্নগুলোতে গভীর আলোচনা করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, সূরা আন - নিসা (৫৮) আয়াতে বলা হয়েছে,

"নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দেন যে, আমানত তাদের কাছে পৌঁছে দাও যারা সেইটির জন্য যোগ্য"

এই আয়াতটিতে সামাজিক দায়িত্ব, বিশ্বাসহীনতা রোধ এবং ন্যায়পরায়ণতা প্রভৃতি বিষয়ে উঠে এসেছে। কোরআন মানব সম্পর্কে গুরুত্ব, আইন ও ন্যায়বিচার স্থিতিশীল করার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করেছে। এই সমস্ত বিষয়ে আমাদের বর্তমান সমাজে যেমন দারিদ্র, বৈষম্য, নারী - পুরুষের সমতা, এবং মানবাধিকার সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সূচনা করে। বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়, যা বর্তমান সময়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়। এজন্য আল কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ জানা জরুরি।

কুরআনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত এবং তাদের বিশ্লেষণ

নিচে প্রতিটি উল্লেখিত বিষয় ভিত্তিক থিম থেকে কিছু আয়াত এবং তাদের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো ঃ

  • তাওহীদ - সূরা ইখলাস (১ - ৪) "বলঃ তিনি আল্লাহু, একমাত্র; আল্লাহ রইলেন অনন্য" এই আয়াতে একত্ববাদ তথা আল্লাহর এককত্ব এবং তার বিরলতার বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আল্লাহ যা সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে ঊর্ধ্বে, তার কোন তুলনা হয় না।
  • রিসালাত - সূরা আন - নাহল (৩৬) "আমি প্রত্যেক উম্মতে একটি রাসূল পাঠিয়েছি" এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহর প্রতিটি জাতির জন্য একটি রাসূল প্রেরণ করেছেন, যা মানবজাতির জন্য তার বার্তার ধারাবাহিকতা ও ধার্মিকতা নিশ্চিত করে।
  • আখিরাত - সূরা আল - ইমরান (১৮৫)  "প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে" এই আয়াতে জীবন এবং মৃত্যুর অমোঘ সত্য, পাশাপাশি পরকালের জীবনের অপরিহার্যতা বুঝানো হয়েছে। এটি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং পরকালীন জীবন চিরস্থায়ী।
  • ইবাদত ও নৈতিকতা - সূরা আল - আনকাবুত (৪৫) এ উল্লেখ রয়েছেঃ "নিশ্চয়ই সালাত মানুষকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে" এতে দেখা যায় যে ইবাদত এবং নৈতিকতার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।
  • সমাজ ও আইন - সুরা আন - নিসা (৫৮) এ বলা হয়েছেঃ "নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দেন - আমানত তাদের কাছে পৌঁছে দিতে" এই আয়াতটি সামাজিক দায়িত্ব এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
প্রতিটি আয়াত নিচে একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কিন্তু যখন বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ করা হয়, তখন দেখা যায় - এই আয়াতগুলো একেকটি থিমের অংশ হিসেবে কোরআনের বৃহত্তর বার্তা সঙ্গে অত্যন্ত সমন্বিতভাবে যুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, তাওহীদ থিমটি কেবল একাধিক আয়াতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং রিসালাত, আখিরাত, নৈতিকতা এবং সমাজের বিভিন্ন দিকেও প্রতিফলিত হয়।

আল-কুরআনের-বিষয়ভিত্তিক-আয়াত-ও-বিশ্লেষণ

বিষয়ভিত্তিক কুরআন অধ্যায়নের উপকারিতা

কুরআন অধ্যায়ন করার বিষয়ভিত্তিক পন্থা বহু সুফল বয়ে আনে ঃ

  • একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে যেমন ন্যায়বিচার নিয়ে যখন কুরআনের সব আয়াত একত্রিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়, তখন তা থেকে উদাহরণ, নির্দেশনা ও প্রতিক্রিয়া মিলিয়ে ব্যাপক ধারণা পাওয়া যায়।
  • এই পদ্ধতি পাঠককে চিন্তা ভাবনায় উদ্বুদ্ধ করে; কেবল পোড়া নয়, বরং ভাবতে বাধ্য করে যে কিভাবে এই আয়াত ও থিম আজকের জীবনে প্রয়োগ করা যায়।
  • গবেষণা বা দাওয়াতের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক কুরআন অধ্যায়ন বিশেষভাবে কার্যকর। কারণ এতে পাঠক বা শ্রোতাদের কাছে 'এই বিষয়ে কুরআন কি বলে' -  এই স্পষ্ট প্রশ্ন উত্থাপন করা যায়।
  • এটি কুরআনের সমগ্র ও সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। কোরআন কেবল একাধিক বিষয়ই নয়, বরং জীবনের অভিন্ন দিকগুলো সম্পর্কেও নির্দেশনা দেয়।
  • সামাজিক পরিবর্তন, নৈতিক উন্নয়ন এবং ব্যক্তিগত বিকাশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা বিষয়। মানুষের চরিত্র নির্মাণ থেকে শুরু করে সমাজে নীতিমালা পর্যন্ত, পুরানি বেশ কিছু নির্দেশনা রয়েছে যা আল কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ এ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার

আল কুরআন শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় বই নয়, বরং এটি জীবনের জন্য এটি নির্দেশিকা, মানবতার জন্য নীতি এবং বিশ্বাস ও নৈতিকতার মৌলিক উৎস। যখন আমরা এর আয়াতীনগুলো গভীর বিশ্লেষণ করি, তখন বুঝতে পারি যে কুরআন কেবল একাধিক আয়াতের মিলন নয়, বরং এটি একটি সুসংবদ্ধ এবং পরস্পর সম্পর্কিত বার্তায় পরিপূর্ণ। তাওহিদের ধারণা থেকে নবুওতের বার্তা, পরকালীন জীবন, ইবাদত ও নৈতিকতা এবং সামাজিক আইন - এই সমস্ত বিষয়ে কুরআনকে একটি উদ্দেশ্যমূলক জীবন যাপন করার পথে আমাদের নির্দেশনা দেয়। আল কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ এ জন্য জরুরি।

আজকের এই অনিশ্চিত জীবনে, যেখানে অশান্তি নৈতিক সংকট এবং সামাজিক পরিবর্তনের সন্ধান মিলে, কুরআনের বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ অত্যন্ত কার্যকরী। এটি কেবল পাঠের জন্য নয়, বরং বোঝার এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার জন্য পরিহার্য। প্রতিদিন যদি আপনি কোন একটি বিশেষ থিম নিয়ে আয়াত বিশ্লেষণ করতে শুরু করেন, তাহলে সময়ের সাথে সাথে কোরআনের একটি সামগ্রিক চিত্র আপনার সামনে খুলে যাবে। এই চিত্রটি আপনার ঈমান, আচরণ, চিন্তা ও কাজকে সমৃদ্ধ করার একটি শক্তিশালী উৎস হিসেবে কাজ করে।

লেখকের শেষ কথা

আল কুরআন শুধু মাত্র একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং এটি মানব জীবনের একটি সম্পূর্ণ দিক নির্দেশনা। এর প্রতিটি আয়াতে জ্ঞান, নৈতিকতা, ন্যায়বিচার এবং মানবতার আলো রয়েছে। যদি আমরা বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে কুরআনকে বোঝার চেষ্টা করি এবং সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করি, তাহলে অশান্তি, বিভ্রান্তি ও অন্যায় কমে যাবে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে আল্লাহর নির্দেশিত শান্তিপূর্ণ সমাজ। ইনফোনেস্টইন বিশ্বাস করে যে - কুরআন জ্ঞানের প্রকৃত উৎস এবং সেটিকে বুঝে জীবন যাপন আমাদের সেরা সাফল্য। পাঠক, যদি আপনি এই লেখায় উল্লেখিত চিন্তা থেকে কিছু জ্ঞান পেয়ে থাকেন, তাহলে কুরআনের আলো আরও ছড়িয়ে দিতে এই বার্তাটি অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকে, দয়া করে কমেন্টে জানাতে দ্বিধা করবেন না। আরো এমন ইসলামিক কনটেন্ট পেতে আমাদের ব্লগ ইনফোনেস্টইন অনুসরণ করতে ভুলবেন না। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন ইনফোনেস্টইন এর সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইনফোনেস্টইনের শর্তাবলী মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট পর্যাবেক্ষন করা হয়।

comment url