২০২৬ - এ শীতকালে টমেটো চাষঃ উন্নত জাত ও ফলন দ্বিগুণ করার কৌশল
২০২৬ সালের শীতকালে টমেটো চাষ সফলতার জন্য আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার প্রয়োজন হবে। উন্নত জাত, আধুনিক চাষ পদ্ধতি, এবং ফলনের দ্বিগুণ করার কার্যকর উপায় গুলো তুলে ধরা হলো। সম্পূর্ণ গাইডের জন্য বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
২০২৬ সালে টমেটো চাষ ফলন বাড়ানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে এই উপায় গুলির মধ্যে উন্নত জাত নির্বাচন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং পোকা দমনের পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ ২০২৬ - এ শীতকালে টমেটো চাষঃ উন্নত জাত ও ফলন দ্বিগুণ করার কৌশল
- ভূমিকাঃ ২০২৬ - এ শীতকালে টমেটো চাষ
- টমেটো চাষের জন্য উপযুক্ত সময় ও আবহাওয়া
- ২০২৬ সালের উন্নত টমেটো জাত
- মাটি প্রস্তুতি ও সার ব্যবস্থাপনা
- চারা তৈরি ও রোপনের কৌশল
- ফলন দ্বিগুণ করার আধুনিক প্রযুক্তি
- রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা
- সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
- বাজারজাতকরণ ও লাভ বৃদ্ধির প্রয়াস
- উপসংহার
- লেখকের মতামত
ভূমিকা ঃ ২০২৬ - এ শীতকালে টমেটো চাষ
বাংলাদেশী কৃষির মধ্যে টমেটো একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং লাভজনক ফসল হিসেবে চিহ্নিত। বিশেষ করে শীতকাল টমেটো চাষের জন্য একটি সোনালী সময় হয়ে ওঠে। এই মৌসুমে জলবায়ু অনুকূল থাকা, পোকামাকড়ের আক্রমণের হার কম থাকা এবং বাজারে চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে কৃষকদের কাছে শীতকালীন টমেটো চাষ একটি বিশেষ আশীর্বাদ বলা হয়। ২০২৬ সালের দিকে দেশের কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত জাত এবং স্মার্ট কৃষি পদ্ধতির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে টমেটো চাষের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে কৃষকরা কেবল বীজ বপন ও ফসল সংগ্রহে সীমিত থাকছেন না; বরং তারা মাটির গুণগতমান বিশ্লেষণ, সঠিক সার ব্যবস্থাপনা, রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন এবং জৈব সার ও আধুনিক শেষ প্রযুক্তির ব্যবহার করে ফলন বাড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। এই পরিবর্তনের ফলে, আগের তুলনায় একক জমিতে দ্বিগুণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে - যা বাংলাদেশের কৃষির জন্য একটি বিপ্লবী পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০২৬ সালের শীতকালীন মৌসুমী যদি কৃষকরা উন্নত জাত চয়ন, যথাসময়ে রোপন, সঠিক পুষ্টি সরবরাহ এবং কার্যকর রোগ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করেন, তাহলে টমেটো উৎপাদন দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বাড়ানো সম্ভব হবে। এছাড়া, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার - যেমন ড্রিপ সেচ, মালচিং, গ্রিনহাউস চাষ, এবং জৈব বালাইনাশক - মাল্টিপ্লাই উৎপাদন খরচ কমিয়ে লাভ বাড়ানোর পথও খুলে দিচ্ছে।
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব 2026 সালের শীতকালে টমেটো চাষের জন্য একটি সেরা উন্নত জাত গুলো কি হতে পারে, কি পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে ফলন দ্বিগুণ করা সম্ভব এবং কিভাবে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করে একজন সাধারণ কৃষক সফল উদ্যোক্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন।
টমেটো চাষের জন্য উপযুক্ত সময় ও আবহাওয়া
বাংলাদেশের আবহাওয়া টমেটো চাষের জন্য খুবই সহায়ক, যে শত শীতকাল এই ফসলের জন্য সেরা সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও টমেটো একটি শীতকালীন ফসল, তবে এর বীজ ভবনের সঠিক সময় এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি জানলে তবেই কাঙ্খিত ফলন অর্জন করা সম্ভব। তাই, টমেটো চাষের ক্ষেত্রে সঠিক সময় এবং আবহাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
টমেটোর চারা তৈরি করার জন্য সেরা সময় হলো ভদ্র থেকে আশ্বিন মাস, অর্থাৎ আগস্টের শেষ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এই সময় তাপমাত্রা কমতে শুরু করে এবং রোগবালায়ের সমস্যা কম হয়। সাধারণত চারার রোপনের জন্য জমি কার্তিক মাসে, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে প্রস্তুত করা হয়, কারণ এই সময় তাপমাত্রা টমেটো গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হয়। চারা রোপণে .৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল ফুটতে শুরু করে, এবং ফল সংগ্রহ করা যায় পৌষ থেকে ফাল্গুন মাস (ডিসেম্বর থেকে মার্চ) পর্যন্ত। এজন্য যেসব কৃষক সঠিক সময়ে যারা প্রস্তুত ও রোপন করবেন, তারা পুরো মৌসুমে ভালো ফলন এবং সঠিক বাজার মূল্য উপভোগ করতে পারবেন।
টমেটো চাষের জন্য সঠিক তাপমাত্রা
টমেটো গাছগুলি মাঝারি শীতল আবহাওয়ায় ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। এর জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হলো -
- চারা প্রস্তুতির সময় - ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- ফুল ও ফল উন্মোচনের সময় - ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস
- অতিরিক্ত ঠান্ডা বাতাস আর গাছের বৃদ্ধি নষ্ট করতে পারে এবং ফুল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
আবহাওয়া এবং মাটির উপযোগিতা
টমেটো চাষের জন্য হালকা দোঁআশ এবং উর্বর মাটি অত্যন্ত উপযোগী। মাটির pH স্তরের ideal পরিসীমা ৬.০ থেকে ৭.০ হলে টমেটো গাছ ভালোভাবেই বৃদ্ধি পেতে পারে। ভারী বা জলাবদ্ধ মাটি টমেটোর জন্য ক্ষতিকর, কারণ এতে গাছের মূল পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া, টমেটো গাছ পর্যাপ্ত সূর্যালোক পছন্দ করে। প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়, যা গাছের সুস্থতায় অপরিহার্য। শীতকালে কুয়াশা বেশি হলে অথবা সূর্যোদয় দেরিতে হলে, গাছের বৃদ্ধি কিছুটা সন্তরণে আসতে পারে। সে কারণে, জমি নির্বাচনের সময় খোলা এবং উজ্জ্বল স্থান পেয়েছে নেওয়া উচিত।
বৃষ্টিপাত এবং আদ্রতা
টমেটো গাছ অতিরিক্ত পানির চাপ সহ্য করতে পারে না, তাই চারা রোপনের জন্য এমন সময় নির্বাচন করা উচিত যখন অতিবৃষ্টি বা জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা কম থাকে। অন্যদিকে, খুব শুকনো পরিবেশেও গাছটি দুর্বল হয়ে যায়। সাধারণত, গড় আদ্রতা ৫০% থেকে ৭০% এর মধ্যে থাকলে টমেটো গাছ সর্বোচ্চ ফলন দেয়।
সঠিক সময় এবং উপযুক্ত আবহাওয়া টমেটো চাষ করলে যেমন ফলনের উন্নতি ঘটে, তেমনি রোগ এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কমে যায়। তাই টমেটো চাষের সফলতার জন্য আগস্টের শেষ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে চারা তৈরি করা আবশ্যক। পরে, অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে সেই চারাগুলো রুকনের কাজ করতে হবে এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করতে হবে। যথাযথ সময় এবং আবহাওয়ার বিচার করে চাষ করার মাধ্যমে ২০২৬ সালের শীতকালীন টমেটো মৌসুম হতে পারে আপনার কৃষি জীবনের সবচেয়ে সফল পর্ব।
২০২৬ সালের উন্নত টমেটো জাত
বাংলাদেশ টমেটো চাষ ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করছে, এবং এর প্রধান কারণ উন্নত জাতের উদ্ভাবন। ২০২৬ সালের শীতকালীন মৌসুমে চাষে উপযোগী বেশ কিছু নতুন ও হাইব্রিড জাত ইতি মধ্যেই কৃষকদের মধ্যে বড় আকারে সারা সৃষ্টি করেছে। এসব জাত শুধু ফলনে বেশি নয়, বরং রোগ প্রতিরোধের সক্ষমতা, স্বাদের উন্নতি এবং সংরক্ষণযোগ্য সময়ের উন্নতি ঘটিয়েছে। ২০২৬ - এ শীতকালে টমেটো চাষ এর কিছু উন্নত জাতের পরিচয়।
BAU Beefsteak Tomato - বি,এ,ইউ বিফস্টিক টমেটো
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা উদ্ভাবিত এই টমেটো জাতটি ২০২৬ সালি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর ফলের আকার বড় (৩০০ - ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত) এবং স্বাদ মিষ্টি। অতি হেড হয়ে উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৪০ - ৫০ টন হতে পারে। এই গাছটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক জনিত রোগের প্রতিরোধের প্রতিরোধী। বাজারে এর চাহিদা বাড়ছে কারণ এটি দীর্ঘ সময় ধরে তাজা থাকে।
BARI Hybrid Tomato - বারি হাইব্রিড টমেটো
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এই জাতটি হাইব্রিড প্রকৃতির এবং শীতকালে চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। ফল মাঝারি আকারের, মসৃণ ত্বকবিশিষ্ট, এবং লালচে উজ্জ্বল রঙের। এই জাতটি টমেটো স্পট ভাইরাস ও লেট ব্লাইট রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৬০ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
Lalima F1 Hybrid - লালিমা এফ ১ হাইব্রিড
এটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নতমানের হাইব্রিড জাত, যা বিশেষভাবে ঠান্ডা অঞ্চলের জন্য আদর্শ। এর ফলনের পরিমাণ অত্যন্ত উচ্চ, প্রতি গাছে গড়ে ২৫-৩০ টি টমেটো জন্মায়। ফলগুলো ঘন ও মজবুত হওয়ার পরিবহন এবং সংরক্ষণে কোন সমস্যা হয় না। বাজারে এই জাতটি লাভজনক হওয়ায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
Roma VF (Processing Variety) - রোমা ভি,এফ (প্রসেসিং ভ্যারিয়েটি)
যারা প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে টমেটো চাষ করতে আগ্রহী, যেমন সস, কেচাপ, কিংবা পিউরি তৈরির জন্য, তাদের জন্য রোমা ভি,এফ (Roma VF) জাতটি একটি চমৎকার পছন্দ। এই যাতে টমেটো লম্বাটে আকৃতির, শক্ত খোসা রয়েছে এবং গাছ থেকে একসাথে প্রচুর সংখ্যা ফল উৎপাদন করে।
২০২৬ - এ শীতকালে টমেটো চাষ করতে হলে উন্নত টমেটো যাতে সঠিক রোপন, সারব্যবস্থাপনা এবং সেচ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফলন দ্বিগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। এই জাতগুলি রোগ ও পোকামাকড়ের প্রতিরোধ ক্ষমতা রক্ষার কারণে কৃষকদের জন্য ঝুঁকি কম এবং লাভের সম্ভাবনা বেশি হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া সাথে এসব জাত দ্রুত মানিয়ে নিচ্ছে। অতএব, আগামী মৌসুমে যারা আধুনিক চাষের পদ্ধতি এবং উন্নত নির্বাচন করবেন, তারা নিশ্চিতভাবেই উচ্চতর ফলন এবং ভালো বাজার দর উভয়টাই অর্জন করতে পারবেন।
আরো পড়ুন ঃ কাঁঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
মাটি প্রস্তুতি ও সার ব্যবস্থাপনা
টমেটো চাষের সর্বোচ্চ ফলন অর্জনের জন্য সঠিক মাটি নির্বাচন এবং জমি প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরী। কারণ, টমেটো গাছের শিকড়ের বিকাশ, পুষ্টি গ্রহণ এবং ফলের গুণগতমান - সবগুলোই মাটির গুণগতমানের উপর নির্ভর করে। ২০২৬ সালের আধুনিক টমেটো চাষে, কেবল চাষের উপর জোর না দিয়ে বড় মাটি বিশ্লেষণ এবং উপযুক্ত সার ব্যবস্থাপনাকে সফলতার মূল চাবিকাঠি হিসেবে ধরা হচ্ছে।
মাটির প্রকৃতি ও গঠন টমেটো চাষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে টমেটো চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি অত্যন্ত আদর্শ। এই প্রকারের মাটি জল নিষ্কাশনে কার্যকর এবং পর্যাপ্ত ধরে রাখতে সক্ষম, যা টমেটো গাছের শিকড়ের উন্নতিতে সহায়ক। মাটির pH মান ৬.০ থেকে ৭.০ এর মধ্যে থাকা শ্রেষ্ঠ, কারন এই পরিসরে গাছ সহজেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গুলো গ্রহণ করতে পারে। যদি মাটি বেশি অম্লীয় হয়ে যায়, তবে pH মান ঠিক করার জন্য সেখানে চুন প্রয়োগ করা উচিত।
জমির প্রস্তুতি চাষের পূর্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটিকে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে ঝরঝরে করার প্রয়োজন। সাধারণভাবে, ৩ থেকে ৪ বার চাষ এবং প্রতিটি চাষের পরে মই দিয়ে দেয়াই ভালো। শেষ চাষের সময়, প্রতি শতকের জন্য ২ - ৩ কেজি জৈব সার (যেমন গোবর বা কম্পোস্ট) মাটির সঙ্গে মিশে দেওয়া উচিত। এর ফলে মাটির উর্বরতা এবং জীবাণু সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়, যা গাছে দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যদি আপনার এলাকায় একটি সম্ভাবনা থাকে, তবে উঁচু বেড তৈরি করে চারা রোপন করা একদম সঠিক পদ্ধতি। এতে অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে গাছের মূল পচে যাওয়া সম্ভাবনা কমে যায়।
জৈব সার ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে টমেটো চাষের রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহারের হার দ্রুত বাড়ছে। এর প্রধান কারণ হলো যেকোনো জৈব নতুন সার মাটির গঠন উন্নত করে এবং দীর্ঘমেয়াদি উর্বরতা বজায় রাখে। প্রতি একশত বর্গমিটার জমিতে সাধারনত প্রায় ৫-৭ কেজি সার বা কম্পোস্ট সার, ১ কেজি ছাই 100 গ্রাম হাড়ের গুড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া, জমিতে ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহার করা হলে গাছের বৃদ্ধির ত্বরান্বিত হয় এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আধুনিক কৃষকরা মাটিতে জৈব সার মেশানোর পাশাপাশি ধরনের উন্নতিতে কাজ করছেন।
রাসায়নিক সার ব্যবস্থাপনায় টমেটো গাছের জন্য অপরিহার্য প্রধান পুষ্টি উপাদান তিনটি, যা হলো নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), এবং পটাশ (K)। প্রতি শতক জমির জন্য সাধারণত নিজের মতো সার প্রয়োগ করা উচিত -
- ইউরিয়া ঃ ২০০ - ২৫০ গ্রাম
- টিএসপি ঃ ১৫০ - ২০০ গ্রাম
- এমওপি (পটাশ) ঃ ১৫০ - ২০০ গ্রাম
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ব্যবস্থাপনায় টমেটোর কাছে জন্য বোরন, জিংক, সালফার এবং ক্যালসিয়ামও ু অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এসব মৌলিক উপাদানের অভাব দেখা দিলে গাছের পাতা ছোট হয়ে যায়, ফুল ঝরে পড়ে এবং ফলের আকার ও ছোট হয়ে যেতে পারে। তাই মাটির নিয়মিত পরীক্ষা করে ঘাটতি মেটানো উচিত। প্রয়োজনে, প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম বোরাক্স বা বা জিংক সালফেট মিশিয়ে পাতা স্প্রে করা যেতে পারে।
সঠিকভাবে মাটি প্রস্তুত এবং ষাঁড়ের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে টমেটো গাছগুলি আরো শক্তিশালী, স্বাস্থ্যবান এবং ফলনশীল হয়। ২০২৬ সালের স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থার আওতায় এখন প্রতিটি কৃষক উপলব্ধি করতে পারছেন - "মানসম্মত মাটি মানে উন্নত ফলন"। সুতরাং, জমি চাষের পূর্বে মাটির বিশ্লেষণ, জৈব সার ব্যবহারের কৌশল স্থির করা এবং সঠিক সারের প্রয়োগের সময়সূচী নির্ধারণ করা হলে টমেটোর ফলন সহজে দ্বিগুণ করা সম্ভব।
চারা তৈরি ও রোপনের কৌশল
২০২৬ - এ শীতকালে টমেটো চাষ ঃ উন্নত জাত ও ফলন দ্বিগুণ করার কৌশল এর মধ্যে টমেটো চাষের সাফল্য অধিকাংশই চারা তড়িৎ উৎকর্ষতা এবং সঠিক সময়ে রোপণের উপর নির্ভরশীল। একটি ভালো চারার অর্থ হচ্ছে শক্তিশালী গাছ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত এবং ফলনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। তাই ২০২৬ সালের স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থায় চারা তৈরি ও রব্বুন প্রক্রিয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
চারা তৈরীর সময় ও বীজ নির্বাচন কমিটি চাষের জন্য অত্যন্ত জরুরী। টমেটো চাষের জন্য চারা তৈরি আদর্শ সময় হল ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাস, বা আগস্টের শেষ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি। এই সময়ে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা ও আদ্র থাকে, যা টমেটো জানার জন্য সর্বাধিক উপযোগী। ভালো চারা পেতে হলে অবশ্যই উন্নত জাতির ব্যবহার করা জরুরী। বর্তমান সময়ে বি,এ,ইউ বিফস্টিক ১, বারি হাইব্রিড টমেটো ৮, রাতান বারী টমেটো ১৫ এবং লামিয়া এফ ১ ইত্যাদি বীজ কৃষকদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বীজ বপনের আগে ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম বাভিস্টিন (ছত্রাকনাশক) মিশিয়ে বীজগুলো ভিজিয়ে রাখলে ছত্রাক জনিত রোগের ঝুঁকি কমে আসে।
বীর্যতলা প্রস্তুতি ও চারা তৈরির জন্য একটি উজ্জ্বল, উঁচু এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধা সম্মানিত স্থান বেছে নেওয়া উচিত। বীজতলার আদর্শ মাপ প্রায় ৩ মিটার * ১ মিটার হওয়া ভালো। প্রতিটি বীজ তলায় ১০ থেকে ১২ কেজি পচা গোবর সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরিয়ে করে প্রস্তুতি নিতে হবে। এরপর ১ থেকে ২ সেন্টিমিটার গভীরে শাড়ি বেঁধে বীজ রোপন করতে হবে এবং উপরে পাতলা ঘর বা ঘাস দিয়ে দিতে হবে। এর ফলে আদ্রতা বজায় থাকে এবং বীজ দ্রুত অঙ্কুরিত হয়। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় হালকা পরিমাণে পানি দেওয়ার দরকার হবে, তবে অতিরিক্ত পানি জমার বিষয়েরই মাথায় রাখতে হবে। সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে চারা রোপনের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়।
যারা পরিচর্যার প্রধান সমস্যা হলো ছত্রাক এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ। এই কারণে, সপ্তাহে একবার বাভিস্টিন বা কপার অক্সিক্লোরাইডের মিশ্রণ স্প্রে করলে রোগীর সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। যখন যারা ৪ - ৫ ইঞ্চি উচ্চতায় পৌঁছে এবং ৫-৬ এই পাতা গজিয়ে ওঠে, তখন এই মূল জমিতে রোপনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। রোপনের ৫-৭ দিন আগে ধীরে ধীরে জল দেওয়া বন্ধ করতে হবে, এতে চারাগুলো আরো শক্তিশালী হবে এবং জমিতে রোপনের পর টিকে থাকতে সুবিধা হবে।
জমিতে চারার রোপনের জন্য সন্ধ্যা বা বিকেলে সময় পরীক্ষা করা সবচেয়ে কার্যকর কারণ এই সময়ে তাপের প্রভাব কম থাকে, ফলে যারা গুলো নতুন পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। গাছের মধ্যে ৬০ সেন্টিমিটার এবং প্রতিটি সারের মধ্যে ৭৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর ফলে আলো এবং বাতাসে সঠিক প্রবাহ নিশ্চিত হয়, যা গাছের উন্নয়নেও সহায়ক। রোপনের পূর্বে মাটিতে কিছুটা পানি দিতে হবে। রোপনের পর প্রতিটি গাছের গোড়ায় নিবিড়ভাবে পানি দেওয়া উচিত এবং প্রথম ৩-৪ দিনকাল গাছগুলো ছায়ায় রাখতে হবে, যাতে গাছগুলো তীব্র রোদে নরম হয়ে না যায়।
এখনকার আধুনিক টমেটো চাষ কালে পলিথিন মালচ ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পদ্ধতি আগাছার বৃদ্ধি কমাতে সহযোগিতা করে, পানি সংরক্ষণের সহায়তা করে এবং মাটির তাপমাত্রাকে স্থিতিশীল রাখে। আরও একটি সুবিধা হল, যখন ড্রিপ সেচ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তখন এটি পানির ব্যবহারকে কমিয়ে আনে এবং গাছের গোড়ায় আদ্রতা সমানভাবে বজায় রাখতে সহজতা করে।
ভালো চারা হচ্ছে সফল টমেটো চাষের মূল চাবিকাঠি। সঠিক সময়ে বীজ বপন করা, উন্নত জাত নির্বাচন করা, পরিচ্ছন্ন বীজতলা তৈরির ব্যবস্থা করা, সঠিক রোপন দূরত্ব বজায় রাখা এবং যথাযথ পরিচর্যা নিশ্চিত করা - এইসব কৌশল গুলো ২০২৬ সালের শীতকালীন টমেটো চাষকে দ্বিগুণ ফলনশীল এবং লাভজনক করে তুলতে পারে।
ফলন দ্বিগুণ করার আধুনিক প্রযুক্তি
বাংলাদেশের শীতকালে টমেটো একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় শাকসবজি। এটি পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরের চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু অনেক কৃষক এখনো পুরনো পদ্ধতিতে চাষ করতে থাকেন, যার কারণে ফলন সন্তোষজনক হয় না। তবে আধুনিক প্রযুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার করে একই জমিতে দ্বিগুণ ফলন অর্জন করা সম্ভব। বর্তমানে টমেটো চাষে উন্নত জাত, সঠিক চারা প্রস্তুতি, স্মার্ট সেচ প্রযুক্তি, সমন্বিত স্যার ব্যবস্থাপনা, কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ এবং ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থাপনার ব্যবহার ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টমেটো চাষের ফলন দ্বিগুণ করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হলো উন্নত জাতের নির্বাচন করা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেমন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই), বিআরডি, এবং আইআরআরআই অনেক উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এই জাতগুলো রোগপ্রতিরোধী, দ্রুত বেড়ে উঠে এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম। কিছু পরিচিত উন্নত জাতের মধ্যে রয়েছে বিএআরআই টমেটো - ১৪,১৫,১৭,১৮,১৯ ও ২১। এই জাতগুলো উচ্চ ফলনশীল,ফলগুলো লাল ও মসৃণ এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী। রুপালি ও সৈকত জাত প্রচন্ড গরম ও ঠান্ডা দুই মৌসুমেই ফলন দিতে সক্ষম।
পাশাপাশি, হাইব্রিড জাত, যেমন মিলা, আনিকা, সুপার প্রিন্স ও সোনালী হাইব্রিড, এসব জাতের গাছে প্রতিফলন ৮০ থেকে ১০০ মণ হতে পারে, যেখানে সাধারণ জাতের ফলন ৪০ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। সঠিক বীজ নির্বাচন করতে, বীজগুলোকে ট্রাইকোডার্মা, বেভিস্টিন, বা কপার অক্সিক্লোরাইড দিয়ে পক্রিয়াজাত করা অত্যন্ত কার্যকর। এই পক্রিয়ার ফলে চারা রোগমুক্ত থাকে এবং গাছের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ভালো যারা ভালো ভালো নিশ্চিত করে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে টমেটো যারা উদ্বোধন করা হয় সিড ট্রে, কোকোপিট, ভার্মিকম্পোস্ট, এবং ইউনিক এসিড এর সাহায্যে। এই প্রক্রিয়ায় তৈরি চারা মজবুত এবং একইভাবে বেড়ে ওঠে, ফলে রোপনের পর সুগম ভাবে নতুন পরিবেশে মানে নিতে পারে। যারা রোপনের পূর্বে ১৫ থেকে ২০ দিন আগে জমি ভালো মতো চাষ করতে হবে এবং তাতে পচা গোবর সার, ভার্মিকম্পোস্ট, এবং বায়োফার্টিলাইজার মিশিয়ে নিতে হবে। চারা রোপনের সময় ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার দূরত্ব বজায় রাখা বিশেষত্ব প্রয়োজন, যাতে আলো ও বাতাস যথেষ্ট পরিমাণে প্রবাহিত হতে পারে।
টানের প্রযুক্তি ব্যবহার করলে যারা শীত এবং শিশির থেকে সুরক্ষিত থাকে, যা ফলন বাড়াতে সহায়ক। অনেক আধুনিক কৃষক নেট হাউজ বা প্লাস্টিক গ্রীন হাউজের দিকে ঝুঁকছেন, যেখানে তাপমাত্রা ও আদ্রতা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই পদ্ধতির পরে ফলনের হার গড়ে ৪০-৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
টমেটো গাছের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ ধরনের মাটি অত্যন্ত উপযুক্ত। সেই সাথে, মাটির pH যদি ৬.০ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে থাকে, তাহলে ফলন সর্বাধিক হয়। ফলন দ্বিগুণ করার জন্য প্রথম ধাপ হিসেবে মাটির পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এটি নির্দেশ করে যে উপাদানগুলোর ঘাট থেকে কিংবা অতিরিক্ততা রয়েছে। মাটি প্রস্তুতি সময় প্রতি শতকের জন্য নিম্নলিখিত উপাদান গুলি ব্যবহার করা যেতে পারে-পচা গোবর ১০-১২ কেজি, টিএসপি সার ১৫০ গ্রাম, এমওপি ১০০ গ্রাম, ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, জিপসাম ৫০ গ্রাম, এবং দস্তা ১০ গ্রাম।
রোপনের ২০ দিন পর থেকে ধাপেধাপে ইউরিয়া সার দেওয়া সর্বোত্তম। সাধারণত এটি ২ থেকে ৩ কিস্তিতে দেওয়া হয়। এছাড়াও, ফার্টিগেশন প্রযুক্তি, যা পানির সঙ্গে সার প্রদানের একটি প্রক্রিয়া, প্রয়োগ করলে সার ব্যবহারের কার্যকারিতা ৮৫% থেকে ৯০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এর ফলে কাজগুলো দ্রুত ফুল এবং ফল উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।
টমেটো গাছের জন্য সঠিক আদ্রতা বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি অতিরিক্ত পানি দেওয়া হয়, তবে গাছের শিকড় পচে যেতে পারে, আর কোম্পানি দিলে ফলগুলো ছোট হয়ে যায়। তাই, ফলন দ্বিগুণ করার জন্য ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতির সর্বাধিক কার্যকর। ড্রিপ সেচ ব্যবস্থায় পানি সরাসরি গাছের গোড়াতে পৌঁছে যায়, যার ফলে পানি খরচ কমে এবং রোগের প্রকোপও কমে আসে। এর ফলে জমির আদ্রতা সমতল হয়, ফলনের বৃদ্ধি ৩০-৪০% পর্যন্ত হতে পারে এবং উৎপাদন করতে সাশ্রয় হয়। কিছু আগ্রহে কৃষক স্প্রিংকলার সেচ প্রযুক্তির সহায়তা নেন।
জাপানি সমানভাবে বিতরণ করে মাটির আদ্রতা বজায় রাখে। এছাড়াও আধুনিক কৃষির ক্ষেত্রে স্মার্ট সেন্সরের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মাটি আদ্রতা পরিমাপ করতে পারে এবং এর মাধ্যমে গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক সময় শেষ প্রদান করা সহজ হয়।
বর্তমানে টমেটো চাষে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার বিস্তৃতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকেরা এখন মোবাইলে অ্যাপ, সেন্সর এবং ড্রোনের মাধ্যমে তাদের ফসলের নজরদারি করছেন। সেন্সরের মাধ্যমে মাটির তাপমাত্রা, আদ্রতা এবং পুষ্টি উপাদানের তথ্য রিয়েল টাইমে পাওয়া যাচ্ছে, যা কৃষকদের সঠিক সময় সেচ এবং সার প্রদান করার সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা ডিজিটাল কৃষি অ্যাপ যেমন " কৃষকবন্ধু" এবং " স্মার্ট ফার্মিং অ্যাপ" এর সুবিধা নিচ্ছেন। এই প্রযুক্তি গুলোর মাধ্যমে তারা আবহাওয়ার পূর্বাভাস, রোগ নির্ণয় এবং বাজার মূল্যের ও তথ্য পেয়ে থাকেন। এর ফলে তাদের উৎপাদন এবং বিক্রয় অভিকেন্দ্রিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশে ল্যাপটপের আপডেট দাম ২০২৫
রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা
টমেটো গুলোতে একটি মারাত্মক রোগ হচ্ছে ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট। এই রোগে আক্রান্ত কাজগুলি অচিরেই চোখে পড়ে এবং কয়েক দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। যখন গাছের কান্ড কাটা হয়, তখন এর ভেতরে আঠালো বাদামি তরল দেখা যায়, যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের অন্যতম চিহ্ন। এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে রোগমুক্ত চারা ব্যবহার করা উচিত এবং জমিতে নিয়মিত ফসল পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
আক্রান্ত গাছগুলো তুলে পুড়িয়ে ফেললে এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া সম্ভাবনা রোধ করা যাই। মাটিতে ট্রাইকোডার্মা এবং বায়ো - ফার্টিলাইজারের ব্যবহার অত্যন্ত ফলপ্রসূ। অপরদিকে, শীতকাল ও শিশিরের সময় লেট ব্লাইট রোগের উপস্থিতি বেশি দেখাতে যায়। এই রোগের ফলে গাছের পাতা এবং ফলে বাদামী দাগ সৃষ্টি হয়, ফল পচে যায় এবং দ্রুত সম্পূর্ণ কাজ আক্রান্ত হতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে, ভালো নিষ্কাশন ও সুবিধা সম্পন্ন জমিয়ে নির্বাচন করা, আক্রান্ত পাতা দ্রুত সরিয়ে ফেলা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রিডোমিল গোল্ড বা ম্যানকোজেব স্প্রে ব্যবহার করা প্রয়োজন।
টমেটো লিফ কার্ল ভাইরাস বা টিএলসিভি একটি গুরুত্বপূর্ণ অসুখ, যা টমেটো চাষের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। এই ভাইরাসের কারণে গাছের পাতা মোচড়াই, উকড়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়ে। এর ফলে ফলনের পরিমাণ অর্ধেকে পতিত হয়। এই ভাইরাসটি মূলত হোয়াইটফ্লাই নামক ক্ষুদ্র কীট পতঙ্গের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই ভাইরাসটির প্রতিরোধ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদক্ষেপ হচ্ছে হোয়াইটফ্লাইয়ের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং রোগমুক্ত ছাড়া ব্যবহার করা।
এছাড়া প্রারম্ভিক ব্লাইট বা আর্লি ব্লাইট নামক রোগের কারণে পাতায় বাদামী বৃত্তাকার দাগ দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে হলেও ছড়িয়ে পড়ে। এই সমস্যার প্রতিকার হিসেবে রোগ প্রতিরোধে জাত, যেমন বিএআরআই টমেটো - ১৫, চাষ করা হলে এবং ম্যানকোজেব বা ক্যাপটান স্প্রে করলে এই রোগকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
টমেটো ফল ছিদ্রকারী পোকা ফসলের প্রধান শত্রু হিসেবে পরিচিত। এই পোকার লার্ভা টমেটোর ভিতর প্রবেশ করে খেয়ে ফেলে, ফলের ফলের আকৃতি বিকৃত হয় এবং বাজার মূল্য হ্রাস পায়। এ ধরনের পোকা দমন জন্য ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর। এই ফাঁদে পোকা আকৃষ্ট হয়ে আটক হয়ে যায়। আক্রান্ত ফলগুলো সংগ্রহ করে বিনষ্ট করা জরুরী, এবং প্রয়োজন হলে স্পিনোসাড বা ইমামেকটিন বেঞ্জোয়েটের মতো কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এছাড়াও, হোয়াইটফ্লাই, থ্রিপস এবং এফিড োকাগুলি টমেটোর জন্য মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এই পোকাগুলি পাতা থেকে রস শোষন করে, ফলে ফুল ও ফল ঝরে পড়তে পারে। হোয়াইটফ্লাই নিয়ন্ত্রণে নীল রঙের স্টিকি ট্র্যাপ এবং নিম পাতার নির্যাস অত্যন্ত কার্যকর। অন্যদিকে, থ্রিপস এবং এফিডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সকালে শেচ দেওয়া, জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা এবং বায়োনিম প্লাস বা ভার্টিসিলিয়াম লেকানি স্প্রে করা যেতে পারে।
স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি গুলি টমেটো চাষের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। বর্তমানে অনেকেই কৃষক স্মার্টফোন অ্যাপ ও সেন্সরের সাহায্যে জমির আদ্রতা, তাপমাত্রা এবং পোকামাকড়ের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। কিছু অঞ্চলের ড্রোন ব্যবহার করা কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে, যা সময় এবং শ্রম উভয় সাশ্রয় করে এবং সঠিকভাবে ঔষধ প্রয়োগেরনিশ্চয়তা দেয়। তাছাড়া, "স্মার্ট ফার্মিং অ্যাপ" মাধ্যমিক কৃষকরা ফসলের রোগ দ্রুত শনাক্ত করতে পারেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেন। এই প্রযুক্তিগুলি রোগ নির্ণয় ও কস্টিক দ্রব্য দ্রুত চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
টমেটো চাষে বর্তমানে জৈব এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। রাসায়নিক কীটনাশকের অতিরিক্ত প্রয়োগের ফলে পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে, তাই বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, নিমপাতা নির্যাস, রসুন এবং মরিচের মিশ্রণ, অথবা বায়ো - কীটনাশক যেমন Bacillus thurin giensis এবং Verticillium lecanii ব্যবহার করিয়ে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়, যা মাটির জৈববৈচিত্রকেও রক্ষা করে। তাছাড়া, টমেটো খেতে গাঁদা ফুল লাগানো একটি কার্যকর ট্রাপ ক্রপ পদ্ধতি, যা অনেক ক্ষতিকর পোকাকে গাঁদা ফুলের দিকে আকৃষ্ট করে, ফলে টমেটো গাছটিকে নিরাপদ রাখে।
সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
টমেটো সংগ্রহের সময় বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভর করে, যেমন এর জাত, ব্যবহার এবং বাজারে দূরত্ব। সাধারণত, বপনের ৭০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে টমেটো পরিপক্ক হয়ে যায়। ফলটি সম্পূর্ণ লাল হওয়ার আগে, অর্থাৎ হালকা সবুজ থেকে হালকা গোলাপি অবস্থায় তুললে সবচেয়ে উপযুক্ত। এর ফলে পরিবহনের সময় ফলের কোন ক্ষতি হয় না এবং বাজারে পৌঁছানোর পর সঠিকভাবে পেকে যায়। যদি টমেটো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা হয়, তাহলে সম্পূর্ণ পাকা বা গারো লাল রঙের ফল তোলা উচিত।
তবে, যদি দূরবর্তী বাজার বা প্রক্রিয়াজাত শিল্পে ফলগুলো পাঠাতে হয় তখন হালকা পাকার অথবা ব্রেকার স্তরের টমেটো সংগ্রহ করা উচিত। টমেটো সংগ্রহের প্রক্রিয়ার ফলের ডাটা সাবধানে ঘুরিয়ে তোলার প্রয়োজন হয়, যাতে ফলের গায়ে কোন ক্ষতি না হয়। সকালে অথবা বিকালে, যখন আবহাওয়া তুলনামূলক ঠান্ডা থাকে, তখন ফসল সংগ্রহ করা অধিকতর উপযোগী। দুপুরের উষ্ণতায় সংগ্রহ করলে ফলগুলো দ্রুত নরম হয়ে যেতে পারে, যার ফলে সংরক্ষণের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
টমেটো একটি অত্যন্ত কমল ফল, তাই পরিবহনের সময় সঠিক প্যাকেজিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঁশের ঝুড়ি, প্লাস্টিকের ক্রেট, অথবা কার্টুন বক্স ব্যবহার করা যেতে পারে; তবে প্রতিটি বক্সের নিচে ও উপরে নরম খর বা কাগজের আস্তরণ দেওয়া উচিত যাতে ফলের গায়ে আঘাত না লাগে। টমেটোকে অতিরিক্ত চাপ দিলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই বক্সে টমেটো মাঝারি পরিমাণে রাখা উচিত।। দূরবর্তী পরিবহনের জন্য টমেটো ঠান্ডা স্থানে রাখা হলে সেগুলি ভালো অবস্থায় থাকে। যদি ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়, তবে খোলা গাড়ির পরিবর্তে ছাউনিযুক্ত ট্রাক নির্বাচন করা উচিত। এভাবে ফলগুলো সূর্যের তপ্ত রশ্মি এবং ধুলোবালি থেকে রক্ষা পায়, ফলে সেগুলো অনেক দিন তাজা থাকে।
টমেটো সংরক্ষণে সঠিক তাপমাত্রা এবং আদ্রতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ ঘরের তাপমাত্রায় টমেটো ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত সঠিক অবস্থায় থাকে, যদিও শীতল এবং ঠান্ডা জায়গায় রাখলে তাদের ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সতেজ রাখা সম্ভব। বড় আকারে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কোল্ড স্টোরেজ অন্যতম কার্যকরী পদ্ধতি। এখানে ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ আদ্রতা নিশ্চিত করা হলে টমেটো ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে।
টমেটো কখনোই ফ্রিজে রাখা উচিত নয়, কারণ এতে ফলটির ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় এবং টমেটোর স্বাদ ও টেক্সচার বদলে যায়। সংরক্ষণের আগে টমেটোকে ভালোভাবে ধোয়া ও শুকিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। যদি টমেটো বেশি পেকে যায় সংরক্ষণের সময়, তাহলে সেগুলো টমেটো পিউরি, সস, বা ক্যাচাপ তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে - এতে খতিয়ান অনুযায়ী এবং অতিরিক্ত আয়ও হয়।
বর্তমানে টমেটো সংরক্ষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে "কন্ট্রোলড অ্যাট্মসফিয়ার স্টোরেজ" (Controlled Atmosphere Storage) প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টমেটোকে এমন একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে রাখা হয়, যেখানে অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, এবং নাইট্রোজেনের মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর ফলে ফল গুলি দীর্ঘ সময় ধরে তাজা থাকে এবং এর রং বা স্বাদে কোন পরিবর্তন হয় না। এছাড়া, "Modified Atmosphere Packing (MAP)" পদ্ধতিতে টমেটোকে বিশেষ ধরনের পলিথিনব্যাকে সংরক্ষণ করা হয়, যা গ্যাসের বিনিময়কে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফলের পরিপক্কতা সংক্রান্ত প্রক্রিয়াটি ধীর গতিতে সম্পন্ন করে।
বর্তমানে বাংলাদেশের নানা আধুনিক কৃষি প্রতিষ্ঠান এবং কৃষক সমবায় সংগঠনগুলো এই প্রযুক্তি গুলোর ব্যবহার করছে। এর ফলে, কৃষকরা টমেটো দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বাজারে সরবরাহ করতে সক্ষম হচ্ছেন, যা তাদের মৌসুম শেষে উচ্চমূল্যে বিক্রির সুযোগ প্রদান করছে।
অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে টমেটো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি কার্যকর ও লাভজনক বিকল্প হিসেবে উঠে আসে। টমেটো থেকে তৈরি করা যেতে পারে বিভিন্ন পণ্য, যেমন ঃ জুস, পেস্ট, সস, কেচাপ, সুপ এবং শুকনো টমেটো। এসব পণ্য দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করা সম্ভব এবং বাজারে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভালো দামি বিক্রি করা যায়। গ্রামের স্তরে ছোট ছোট প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিট স্থাপন করলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত টমেটোর অতিরিক্ত অংশ সংরক্ষণ করতে পারবেন, যা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
বাজারজাতকরণ ও লাভ বৃদ্ধির প্রয়াস
বর্তমানে অনেক কৃষক সমবায় ভিত্তিতে বা কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর মাধ্যমে বড় রাস্তায় আছে, যেমন হোটেল এবং প্রক্রিয়াজ শিল্পের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করে টমেটো বিক্রি করছেন। এর ফলে মধ্যস্থরোগীদের প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে এবং কৃষক রানের জমুল্য অর্জন করছেন। বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে টমেটোর গুণমান, আকার এবং রং অনুযায়ী নির্বাচন করা আকর্ষণীয় প্যাকেজিং অপরিহার্য। কারণ, মনোগ্রাহীভাবে প্যাকেজ করা টমেটো পাইকারি এবং বাজারেই বেশি দামে বিক্রি হয়। কোল্ড স্টোরেজ এবং পরবর্তী বায়ুমন্ডলীয় সংরক্ষণ প্রযুক্তির সাহায্যে টমেটো দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা সম্ভব, যা কৃষকদের অফ - সিজনে উঁচু দামি বিক্রির সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
এর পাশাপাশি, প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে টমেটো থেকে বিভিন্ন পণ্য যেমন টমেটো সস, কেচাপ, পিউরি এবং শুকনো টমেটো তৈরি করে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ তৈরি করা যায়। কৃষকদের পণ্য সরাসরি বাজারে বিক্রির সুযোগ বাড়াতে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো কৃষি বিপন্ন সহায়তা, স্মার্ট কৃষি অ্যাপ এবং অনলাইন কৃষি মার্কেটপ্লেসের ব্যবস্থা করেছে। টমেটো চাষের জন্য পরিকল্পিত বাজারজাতকরণ এবং প্রযুক্তি নির্ভর সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এটি কৃষকদের আয়ের পাশাপাশি দেশের কৃষি অর্থনীতির ও দৃঢ়তা বর্ধন করবে।
আরো পড়ুন ঃ আরবি মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৬
উপসংহার
২০২৬ শালীরে শীতকালীন মৌসুমী টমেটো চাষ বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নত জাতের নির্বাচন, সঠিক সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা এবং গ্রুপ বালাই নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে টমেটোর উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব। বর্তমানে, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় অনেক উচ্চ ফলনশীল প্রতিনিধি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, কার্যকর ফলন দিচ্ছে। ড্রিপ সেচ ব্যবস্থা, জৈব সার, ট্রাইকোডার্মা এবং স্মার্ট কৃষি মনিটরিং সিস্টেমের ব্যবহার টমেটো চাষে ব্যাপক ব্যবহৃত হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে, সঠিক সময় ফসল সংগ্রহ, সুরক্ষা এবং বাজারজাতকরণের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। এসব কৌশল গুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে ২০২৬ সালের শীতকাল টমেটো উৎপাদনের একটি পরিণত হতে পারে। এর ফলে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি দেশের সবজি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
লেখকের মতামত
২০২৬ সালের শীতকালীন টমেটো চাষ সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো - বাংলাদেশের পিসিতে বর্তমানে একটি প্রযুক্তি নির্ভর বিপ্লব ঘটছে, যার মধ্যে টমেটো চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে। যদি কৃষক যথাসময়ে উন্নত জাত বাছাই করে, মাটির উর্বরতার ভিত্তিতে সার ব্যবহার করে এবং আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ড্রিপ সেচ, মালচিং এবং জৈব সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চাষাবাদ করে, তবে ফলনের পরিমাণ দ্বিগুণ করা সম্ভব। আমি আশা করি এইসব গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যদি মাঠ পর্যায়ে আরো বেশি প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে, তাহলে কৃষকরা কেবল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সক্ষম হবে না, আন্তর্জাতিক মানের টমেটো রপ্তানি করতেও সক্ষম হবে। সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ এবং কৃষকদের সচেতনতা-এই তিনটি উপাদান ২০২৬ সালের শীতকালীন টমেটো চাষের সাফল্যের জন্য মূল চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে। আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকে, দয়া করে কমেন্টে জানাতে দ্বিধা করবেন না। আরো এমন ইসলামিক কনটেন্ট পেতে আমাদের ব্লগ ইনফোনেস্টইন অনুসরণ করতে ভুলবেন না। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন ইনফোনেস্টইন এর সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।






ইনফোনেস্টইনের শর্তাবলী মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট পর্যাবেক্ষন করা হয়।
comment url